কামারুজ্জামানের বিচার শেষ আজ

মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আজ এ ব্যাপারে রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ। এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের এই নেতার বিচার কার্যক্রম শেষ হবে। আগের রায় বহাল থাকলে রায় কার্যকরের আগে কামারুজ্জামান চাইলে প্রেসিডেন্টের কাছে মার্সি পিটিশন দায়েরের সুযোগ পাবেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে গতকাল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। কামারুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি প্রধানত চারটি পয়েন্টে তার বক্তব্য উপস্থাপন করে আপিল বিভাগের কাছে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামান আল-বদর কমান্ডার ছিলেন। আল-বদর বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের চেয়েও জঘন্য অপরাধে জড়িত ছিল। কামারুজ্জামান কোন ধরনের অনুকম্পা পেতে পারেন না। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ৩ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে (সোহাগপুর হত্যাকাণ্ড) কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। মূলত তিন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এ সাজা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ নম্বর সাক্ষী ঘটনাটি মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছেন। বাকি দুই সাক্ষীকে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বলা হয়েছে। অথচ জেরায় তারা বলেছেন, তারা কামারুজ্জামানকে প্রথম দেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর। তাহলে ঘটনার সময় তারা কিভাবে কামারুজ্জামানকে চিহ্নিত করেন? তিনি বলেন, এ মামলায় ২০১১ এবং ’১২ সালে প্রকাশিত দুটি বই আমরা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছিলাম। বিচার শুরু হওয়ার পর অসৎ উদ্দেশ্যে  প্রকাশিত হয়েছে বিবেচনা করে আদালত বই দুটির বক্তব্য নাকচ করেছেন। এখন আমরা ফরিদা আখতারের লেখা, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা- নামক একটি বই দাখিল করছি। যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। পরে ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে এই বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে এই মামলার ১৩ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষাৎকার রয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, তার স্বামীকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি আর্মি। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। সরাসরি জড়িত না থাকার বিবেচনায় আপিল বিভাগ সে সাজা কমিয়ে কারাদণ্ড দেন। অথচ সরাসরি জড়িত না থাকা সত্ত্বেও আপিল বিভাগই ৩ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি আবেদন জানান। তিনি বলেন, সারা পৃথিবী এখন মৃত্যুদণ্ড থেকে সরে যাচ্ছে। একমাত্র ন্যুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রায়াল ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল না। আন্তর্জাতিক আইনের এ পরিবর্তন বিবেচনায় নেয়ার জন্যও তিনি আপিল বিভাগে আবেদন জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত পত্রিকায় ও এরপর বিভিন্ন ডকুমেন্টে আল-বদর কমান্ডার হিসেবে কামারুজ্জামানের নাম প্রকাশিত হয়েছে। তিন জন সাক্ষী যদি সাক্ষ্য না-ও দিতেন তবুও কামারুজ্জামানের আল-বদর পরিচয় মুছে যায় না। তিনি যেসব বর্বর অপরাধ করেছেন সে অপরাধে কোন অনুকম্পা হয় না। শুনানি শেষে আদালত আজ সোমবার রায় দেয়ার কথা জানান। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, কামারুজ্জামান যেসব অপরাধ করেছেন তাতে তার শাস্তি লঘু করার কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির বলেন, আমরা আশাকরি কামারুজ্জামান ন্যায়বিচার পাবেন। ২০১৩ সালের ৯ই মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। গত বছরের ৩রা নভেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পরদিন তার বিরুদ্ধে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৫ই মার্চ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন কামারুজ্জামান।

No comments

Powered by Blogger.