কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল, কারাগারে পরিবারের সদস্যরা, রাজধানীর বিভিন্নস্থানে জামায়াতের বিক্ষোভ

জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার প্রতিবাদে আজ রাজধানীর মিরপুর, মগবাজার, দৈনিক বাংলারমোড়, জুরাইন, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা। এসব সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া একজন তরুণকে মিথ্যা ও বায়বীয় অভিযোগে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে অবৈধ সরকার । তারা বলেন, কামারুজ্জামান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। সরকার নেতৃত্বশূন্য করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার যে ষড়যন্ত্র করছে তার ধারাবাহিকতায় কামরুজ্জামানের  মৃত্যুদন্ড। সময়ের ব্যবধানে প্রতি ফোটা রক্তের জবাব কড়ায় গন্ডায় আদায় করা হবে। এদিকে মৃত্যুদন্ড বহালের প্রতিবাদে সকাল ১১ টায় রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে বিক্ষোভ করেছে জামায়াত। মিছিল মিরপুর-১১ নম্বর থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। দলের ঢাকা মহানগরীর সহকার সেক্রেটারী মোবারক হোসাইনের নেতৃত্বে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য লস্কর মোঃ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান, মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, নূরুল ইসলাম আকন্দ, রুপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত আমীর মোঃ নাসির উদ্দিন, জামায়াত নেতা জামাল উদ্দিন,শিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি তামিম হোসাইন, বখতিয়ারউদ্দিন মোঃ তুহিন প্রমূখ। রমনা থানা আমীর ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় মগবাজার চৌরাস্তায় বিক্ষোভ করে রমনা অঞ্চলের কর্মীরা। বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন- শেরেবাংলা নগর থানা আমীর আ.জ.ম কামাল উদ্দিন, রমনা থানা নায়েবে আমীর ড. আহসান হাবিব, জামায়াত নেতা এম জে রহমান, সাইফুল আলম, আতাউর রহমান সরকার,ছাত্রনেতা শরীফুল ইসলাম, জামিল মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। মিছিলটি রেলগেট থেকে শুরু হয়ে চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। সকাল ১১ টায় রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড় ও ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি এলাকায় বিক্ষোভ করেছে জামায়াত। মহানগর মজলিশে শুরা সদস্য মোঃ কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মতিঝিল থানা সেক্রেটারী মোতাসিম বিল্লাহ, শিবির নেতা সোহেল রানা মিঠু, আঃ সাত্তার সুমন প্রমূখ। দুপুর পৌনে ২ টায় রাজধানীর জুরাইন ও গেন্ডারিয়া এলাকায় বিক্ষোভ করেছে জামায়াত। মিছিলটি জুরাইন রেলগেট থেকে শুরু হয়ে গেন্ডারিয়া রেল স্টেশনের কাছে গিয়ে শেষ হয়। মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান ও গাজী আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা অধ্যাপক এন আহমদ, অধ্যাপক মিজানুল হক, আব্দুর রহীম, মহিউদ্দিন, আঃ জব্বার, আলমগীর হোসাইন, ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের সেক্রেটারী গিয়াসউদ্দিন, শিবির নেতা রিয়াজ উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসাইন, ফরিদউদ্দিন, মুসান্না প্রমূখ। বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে বিক্ষোভ করেছে জামায়াত । দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত আমী আঃ বারি আকন্দ, ধানমন্ডি থানা সেক্রেটারী মোহাম্মদ আলী, শিবির নেতা সোহেল মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, সাকিবুল হাসান, মশিউর রহমান প্রমূখ।
নোয়াখালীতে মিছিলে পুলিশের গুলি, শিবির কর্মী নিহত
নোয়াখালীর মাইজদীতে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- বহালের প্রতিবাদে দলটির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে গুলি চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রশিবিরের এক কর্মী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে মাইজদীর মফিজ প্লাজার সামনের প্রধান সড়কে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। এ সময় মিছিলটি সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ তাতে গুলি চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান একজন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের নাম পরিচয় জানা যায়নি। সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে শিবির কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সর্টগানের গুলি ছোড়ে। এসময় দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে নর্দমায় পড়ে এক শিবির কর্মীর মৃত্যু হয়।
কামারুজ্জামানের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না আইনজীবীরা
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাচ্ছেন না তার আইনজীবীরা। সোমবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে তার আইনজীবী এডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ দেখা করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার আছে তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার। বিকালে কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে যাচ্ছেন। আমরা তাদের মাধ্যমে কামারুজ্জামানের সিদ্ধান্ত জানার চেষ্টা করবো। এর আগে, বেলা সোয়া ১১টায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু বিকাল পৌনে ৩টার দিকে তাদের দেখা করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাগারে কামারুজ্জামানের পরিবার
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা কারাগারে প্রবেশ করেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহার, দুই ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি ও হাসান ইমাম ওয়াফি, মেয়ে আতিয়া নূর ও ভাগ্নি রোকসানা জেরিনসহ ১২ জন। এর আগে দুপুরে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার নির্দেশনা দিয়ে পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল ৯ টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করেন। ফলে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল থাকে। নিয়ম অনুযায়ী তিনি  প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন। এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে সরকার দ- কার্যকর করবে। গত বছর ৩রা নভেম্বর আপিল বিভাগের এই বেঞ্চই কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে। ২০১৩ সালের ৯ই মে আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইব্যুনালের রায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.