পঙ্গুতে কড়াকড়ি by মাহমুদ মানজুর

হঠাৎ করেই পঙ্গুতে বেড়েছে পুলিশের নজরদারি। গুলিতে আহত রোগীদের সঙ্গে কথা বলা ও ছবি তোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু)-এ গুলিবিদ্ধ এক রোগীর সঙ্গে আলাপ করতে গেলে, এই প্রতিবেদককে বাধা দেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। তাদের বক্তব্য, বিনা অনুমতিতে কথা বলা যাবে না। এতদিন গুলিতে আহত রোগীরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকলেও, এখন এমন ১২ জন রোগীকে স্থানান্তর করা হয়েছে এবি ওয়ার্ডের এক কর্নারে। আর এই ১২ জন রোগীকে ঘিরে চেয়ারে বসে আছেন ১৬ জন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য। এর বাইরে নতুন ভর্তি হওয়া তিন রোগী পুলিশি প্রহরায় আছেন ইআর ওয়ার্ডে। যাদের মধ্যে দুইজন ভর্তি হয়েছেন গতকাল। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কেস আসামি হিসেবে ভর্তি করা হয় রাজশাহীর বোয়ালিয়া এলাকার সেতুকে। অন্যজন হলেন নোয়াখালী মধুপুর অঞ্চলের মো. হোসেন (৩৫)। সোমবার ভর্তি করা হয় শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ নোমানকে। তিন রোগীই হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ।
সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে পুলিশের গুলিতে আহত হন  নোমান। গুলিবিদ্ধ বাঁ পায়ের যন্ত্রণায় কিছুক্ষণ পর পর কেঁদে উঠছিলেন। তার ওপর বিছানার পাশে লোহার দরজার সঙ্গে হ্যান্ডকাফে বাঁ হাত আটকানো। পরিবারের সদস্যরা নোমানের সংবাদ পেয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ কেউ এসে পৌঁছাননি। তিনি শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী। ১লা ফেব্রুয়ারির জীবনের প্রথম চাকরি নেন ঢাকার একটি জিন্স প্যান্ট তৈরির কারখানায়। তার এক বন্ধু জানিয়েছেন, প্রথম মাসের চাকরির বেতন হাতে পেয়ে সোমবার সকাল দশটার দিকে নোমান সদরঘাট গিয়েছিলেন দু’টি শার্ট কিনতে। তবে শার্ট কেনা হয়নি তার। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে যেতেই ওই এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে দৌড় দেন নোমান। এরপর পেছন থেকে মোটরসাইকেলে এসে দুইজন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে। পরে তাকে হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নোমানের ওই বন্ধুর দাবি, নোমান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে কোন মামলাও নেই। তার পরিবারের কেউ রাজনীতি করে না। এদিকে মোহাম্মদ নোমানের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান মামলার বাদী এসআই সাজ্জাদ। তার সঙ্গে মুঠোফোনে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নোমান ঐ দিন ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে বোমা ফাটিয়ে পালানোর সময় কর্তব্যরত পুলিশের গুলিতে আহত হয়। নোমানের বিরুদ্ধে আগের কোন মামলা আছে কিনা এমন প্রশ্নে এসআই সাজ্জাদ বলেন, এখন ঠিক বলতে পারছি না। সবকিছু খতিয়ে দেখছি আমরা।

No comments

Powered by Blogger.