মোবাইল সেবায় বাংলাদেশের জন্য আসছে নতুন চমক by কাজী সোহাগ

মোবাইল সেবায় বাংলাদেশের জন্য আসছে নতুন চমক। নতুন আকর্ষণ। বিশ্বব্যাপী এগিয়ে যাওয়া প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পিছিয়ে থাকবে না বাংলাদেশও। মোবাইল সেবায় যোগ হচ্ছে ইন্টারনেট রোমিং, ব্যাংকিং সুবিধা, স্বাস্থ্য সেবা, কৃষিখাত ভিত্তিক সেবা ইত্যাদি। স্পেনের বার্সেলোনায় প্রযুক্তির তারকাদের মিলনমেলা থেকেই এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর এটা দিয়েছেন শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রুপ টেলিনর। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন টেলিনরের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির সিইও জন ফেডরিক বাকসাস গতকাল ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রাহকদের জন্য নতুন চমক হিসেবে থাকবে  ইন্টারনেট রোমিং সেবা। এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করার সময় গ্রাহকরা তাদের ইন্টারনেট বন্ধ রাখে। এসময় তারা নির্ভর করে ওয়াইফাই-এর ওপর। এটা পরিবর্তন করতে হবে। এরই অংশ হিসেবে টেলিনর বিশ্বব্যাপী তার গ্রাহকদের জন্য রোমিং সেবা চালু করতে যাচ্ছে। বর্তমানে ১৩টি দেশে তাদের গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, মন্ট্রিনেগ্রো ইত্যাদি। রোমিং সেবা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে টেলিনর-এর সিইও এবং জিএসএমএ’র প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বব্যাপী টেলিনরের গ্রাহক রয়েছে ১৮৬ মিলিয়ন। এরইমধ্যে সুইডেনের গ্রাহকদের  জন্য রোমিং সেবা চালু করা হয়েছে। শিগগিরই নরওয়েতেও এটা শুরু করা হবে। তিনি বলেন, মানসম্মত নেটওয়ার্ক, উপযোগী  হ্যান্ডসেট ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে বাংলাদেশেও এ সেবা দেয়া হবে। আমরা চাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আরও বেশি সংযোগ স্থাপন। এদিকে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে টেলিনরের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান সিগভে ব্রেকে বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল ডাটা সেবাকে আরও বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন। এ জন্য আসন্ন স্পেকট্রাম নিলামকে নিরপেক্ষভাবে করার দাবি জানান। এর আগে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আসা তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে বৈঠক করেন টেলিনর গ্রুপের শীর্ষ কর্তারা। এ প্রসঙ্গে সিগভে ব্রেকে বলেন, বাংলাদেশের টেলিকম পলিসি ১৭ বছরের পুরনো। এরমধ্যে প্রযুক্তির অনেক পরিবর্তন এসেছে। চাহিদাও বিস্তৃত হয়েছে। মন্ত্রী আমাদের বক্তব্য গভীরভাবে শুনেছেন। তিনি নোট নিয়েছেন। স্পেকট্রাম নিলামের বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি সরকার ইন্টারনেট নিয়ে আলাদা পলিসি তৈরির কথা ভাবছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে টেলিনরের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান জানান, স্পেকট্রাম নিলাম নিয়ে যে জটিলতা আছে সেটা শুধু গ্রামীণফোনের জন্য নয় বরং পুরো টেলিকম সেক্টরের জন্য বড় ফ্যাক্টর। তিনি বলেন, স্পেকট্রাম নিলামের জন্য ২৯শে মার্চ পর্যন্ত সময় রয়েছে। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি এ নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় দেখি তারপর আমাদের অবস্থানের কথা জানাবো। এর আগে গ্রামীণফোন নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ খসড়া নিলাম গাইডলাইনের একটি শর্তে মনোপলি নিরুৎসাহিত করার কথা বলে ১৮০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলামে গ্রামীণফোনের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্পেকট্রাম সম্পদ প্রবৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক কাভারেজ সমপ্রসারণ, ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দক্ষভাবে নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তনের ক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ৫ ভাগ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন ব্যবহার। নিরপেক্ষ স্পেকট্রাম নিলাম মোবাইল ব্রডব্যান্ডের বিস্তারকে গতিশীল করবে এবং বাংলাদেশকে একটি ডিজিটালভাবে ক্ষমতাশীল সমাজ এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করবে। ২রা মার্চ থেকে শুরু হওয়া ৪ দিনের সম্মেলনে মূলত ডিভাইস, সফটওয়্যার, মোবাইল সার্ভিস, প্রযুক্তি এবং ব্র্যান্ডের নানা দিক নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রদর্শনী হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্যের। একজন আরেকজনের নতুন সেবা কার্যক্রম থেকেও অভিজ্ঞতা নিচ্ছে। আগামীকাল স্থানীয় সময় দুপুরে সমাপ্তি টানা হবে প্রযুক্তিবিদদের সবচেয়ে বড় এ আসরের। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এসেছেন প্রায় এক লাখ প্রযুক্তিবিষয়ক ব্যক্তিবর্গ। ২২০টি দেশের প্রতিনিধিদের কলরবে মুখরিত বার্সেলোনা। বিশ্বের ৮শ’টি মোবাইল অপারেটর এতে অংশ নিয়েছে। এছাড়াও আছে ২৫০টিরও বেশি প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি।

No comments

Powered by Blogger.