অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড- কোন ক্লু মেলেনি

ব্লগার অভিজিৎ রায় খুনের কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। ফারাবীর দেয়া তথ্যানুসারে কয়েকজন ধর্মীয় উগ্রপন্থিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। ফেসবুক ও ব্লগে লেখালেখি ও হুমকির বিষয়ে নানা তথ্য দিলেও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেনি ফারাবী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফারাবী জানিয়েছে ধর্মের অবমাননা করে কেউ কিছু লিখলে সে তার প্রতিবাদ করতো। অনেক সময় বিক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি-ধামকিও দিয়েছে ফারাবী। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে জড়িত না বলে দাবি করেছে সে। এদিকে, দু’তিন দিনের মধ্যেই তদন্তে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সদস্যরা। ডিবি মনে করে শিগগিরই হত্যা রহস্যের জট খুলবে।
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশ থেকে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামে একটি সংগঠন দায় স্বীকার করে টুইটারে টুইট করে। সূত্রমতে, হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে ওই টুইটার একাউন্টটি খোলা হয়। আর বন্ধ করা হয় পরের দিন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই সংগঠনের অস্তিত্ব এর আগে জানা যায়নি। মূল কিলাররা নিজেদের নিরাপদে রাখার জন্য কৌশল হিসেবে এটি করতে পারে বলে মনে করছেন তারা। তবে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ডিবি।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি ছাড়াও কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিজিৎকে ফারাবীর হুমকির সুযোগে অন্য কেউ হত্যা করতে পারে- এ বিষয়টাও মাথায় রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফারাবী সম্পর্কে নানা তথ্য পেয়েছে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী জানিয়েছে, অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় সে অনুতপ্ত নয়। বরং এই হত্যাকাণ্ড সে সমর্থন করে। তার মতে, অভিজিৎ ধর্মবিরোধী লেখালেখি করতেন এবং তা প্রচার করতেন। এ জন্যই তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলো ফারাবী।  এমনকি অভিজিতের প্রকাশিত বইগুলো বন্ধের জন্য সক্রিয় ছিলো সে।
ফারাবী জানিয়েছে, অভিজিৎ তার পূর্ব পরিচিত ছিলো না। বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতে গিয়েই অভিজিতের লেখা তার দৃষ্টিতে পড়ে। ফারাবীর ভাষ্য, শুধু অভিজিৎ না, বরং অনলাইনে ইসলাম ধর্মের অবমাননাকর কোন লেখা ফারাবীর দৃষ্টিগোচর হলেই সংশ্লিষ্ট লেখককে হুমকি দিতো সে। রাজীব হায়দার হত্যার পর তার জানাজায় যে ইমামতি করবেন তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলো ফারাবী। এমনকি রাজীব হত্যার দায়ে কাশিমপুর কারাগারে আটক দ্বীপ, রুম্মান, অনিক, নাফিস ইমতিয়াজ, নাঈম শিকদার ইরাদ ও সাদমানের সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে দেখা করতে যায় সে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে না থাকার কারণে দেখা হয়নি বলে সে ডিবিকে জানিয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে উগ্রপন্থি অনেকের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের কেউ অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য ফারাবীকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানিয়েছেন, ফারাবীর কাছ থেকে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাকে এ বিষয়ে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিজিৎ হত্যায় ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা সংশ্লিষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে তারা নতুন কোন চক্র কিনা এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়াও অভিজিতের ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এর আগে গত মঙ্গলবার ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি ইস্যু ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জঙ্গি ছাড়াও অভিজিৎকে অন্য কেউ হত্যা করতে পারে কি-না তাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। দু’তিন দিনের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অংশ নেবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। ডিবির সঙ্গে বৈঠক করেই এফবিআই তদন্ত শুরু করবে। এ বিষয়ে ডিবি’র উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, চলতি সপ্তাহেই এফবিআই ঢাকায় আসার কথা। তবে দু’তিন দিনের মধ্যেই তারা ঢাকায় এসে তদন্ত শুরু করবেন।
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী নাফিদা আহমেদ বন্যা। তাদের ঢাকা  মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয় অভিজিৎ রায়ের। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে জঙ্গিবাদীরা দীর্ঘদিন থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল বলে তার স্বজনরা জানান। এ ঘটনায় ফেসবুকে হত্যার হুমকিদাতা শফিউর রহমান ফারাবীকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

No comments

Powered by Blogger.