মানব মস্তিষ্কের বড় আকৃতির নেপথ্যে সক্রিয় জিন শনাক্ত

মানুষের সঙ্গে শিম্পাঞ্জির ৯৯ শতাংশ জিনগত সাদৃশ্য রয়েছে। তবে আমাদের মস্তিষ্ক তাদের তুলনায় তিন গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, বিবর্তনের একপর্যায়ে আমাদের জিনের নিশ্চিতভাবে পরিবর্তন হয়েছিল যা মস্তিষ্কের আকার এত বেশি বৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। কোন জিনটি এ পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, সম্প্রতি তা প্রথমবারের মতো শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন জার্মানির একদল গবেষক। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, আমাদের ও শিম্পাঞ্জিদের আদি পূর্বপুরুষেরা ৫০ লাখ বছরেরও বেশি আগে বিবর্তনের একই গতিপথ থেকে আলাদা হয়ে যায়। তখনই মানব প্রজাতির মধ্যে ওই জিনের আবির্ভাব হয়। এ জিনটি এআরএইচজিএপি১১বি নামে পরিচিত। এটা মস্তিষ্কের নিম্নভাগের স্টেম সেল বিভাজনে অবদান রাখে যার ফলে নিওকরটেক্সে নিউরন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের এ অংশটি যুক্তিতর্ক, ভাষা ও ইন্দ্রিয় অনুভূতির জন্য মুখ্য। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব মলিকিউলার সেল বাইয়োলোজি অ্যান্ড জেনেটিক্সের গবেষকরা মানব মস্তিষ্কের স্টেম সেল এলাকার বিভিন্ন অংশ আলাদা করেন এবং শনাক্ত করেন কোন ধরনের সেল বা কোষে কোন জিনটি সক্রিয় থাকে। তারা দেখতে পেয়েছেন, এআরএইচজিএপি১১বি জিনটি মানুষের মধ্যে থাকলেও শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে নেই। তবে এটা নিয়ানডারথল এবং ডেনিসোভা-হিউম্যানদের মধ্যেও পাওয়া গেছে। ইঁদুরের ভ্রূণে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওই জিনটি মস্তিষ্ক বিকাশে বড় ধরনের প্রভাব রাখতে পারে। যেসব ভ্রূণে এ জিনটি সঞ্চারিত করা হয়েছে তা অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির মস্তিষ্ক গঠন করেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে মানব মস্তিষ্কের মতো ভাঁজপড়া উপরিতলের সাদৃশ্য দেখা গেছে যা খুলির মধ্যে অধিক টিস্যু ধারণ করবার সুযোগ করে দেয়। শীর্ষ গবেষক মার্টা ফ্লোরিও লাইভসাইন্স ম্যাগাজিনকে বলেন, এটা দারুণ একটা ব্যাপার যে স্টেম সেলের ওপর প্রভাব ফেলতে একটিমাত্র জিন যথেষ্ট হতে পারে যা নিওকরর্টেক্সের প্রসারণে সব থেকে বেশি অবদান রাখে। তিনি আরও বলেন, মানব বুদ্ধিমত্তাকে অনন্য করে তোলার পেছনে ব্যাপক সংখ্যক জিনগত পরিবর্তনের মধ্যে এ জিনটি একটিমাত্র পার্থক্য হওয়ার সম্ভাবনা। আনুমানিক ৩৮ লাখ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিসের মস্তিষ্কের আকৃতি ছিল ৩০ ঘনইঞ্চির কম। আনুমানিক ১৮ লাখ বছর আগে হোমো ইরেকটাসের মস্তিষ্ক আকৃতি ছিল তাদের থেকে দ্বিগুণ। এরপর যখন নিয়ানডারথল আর ডেনিসোভানদের আবির্ভাব হয়, তাদের মস্তিষ্কের আয়তন ৮৫ ঘনইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস মানব বুদ্ধিমত্তার পেছনে মস্তিষ্কের বড় আকারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ হলো কিভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো সৃষ্টি হয় তা। গবেষকরা এখন দেখতে চাইছেন, ইঁদুরগুলো ওই জিনসহ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাদের বুদ্ধিমত্তার উন্নতি হয় কিনা।

No comments

Powered by Blogger.