সরকার নেই সরকারে by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

কখনো কখনো বুঝতে খুব অসুবিধা হয় সরকার আসলে কে চালায়? মন্ত্রণালয়গুলো চলে কার নির্দেশে? সেগুলো কি সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী চালান নাকি মন্ত্রণালয় আমার, কাজকর্ম চলে অপরের নির্র্দেশে? কোনো কিছুতেই কোনো খেই পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রীদের মধ্যে নিজ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন দুই-একজন। বাকিদের কাজকর্মে বুঝতে আসলে কষ্ট হয় যে, কোন মন্ত্রণালয় কে চালাচ্ছেন? অর্থাৎ এক মহা তালগোলে আছে শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদের সরকার। আর তিনিও যে কখন কার মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছেন সেটিও দিশ করা সম্ভব হয় না। মন্ত্রণালয়ের মধ্যেই কেউ কেউ আওয়ামী লীগের হাইব্রিডদের কঠোর সমালোচনা করছেন। টিটকারি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের যারা অরিজিনাল, তারা এক এগারোর পর সত্য বলতে গিয়ে ঘোর বিপাকে পড়েছিলেন। সেখান থেকে পাঁচ বছর পর খাবি খেতে খেতে উঠে দাঁড়ালেও এখন একেবারেই ‘জো হুকুমে’ পৌঁছে গেছেন। ফলে এদের মনের ভেতরে ভিন্নমত থাকলেও প্রকাশ করতে পারছেন না। এরাও যেন গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। শেখ হাসিনার কাছে যারা মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, তারা কেউ আওয়ামী লীগার নন। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। এই অনুপ্রবেশকারীরাই ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে ভুল পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করিয়েছিল। গঠন করিয়েছিল একদলীয় বাকশাল, যা কোনো অবস্থাতেই এ দেশের মানুষের আকাক্সক্ষার সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।
এমনকি সে সময় যারা শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎখাতের জন্য গণবাহিনী গঠন করে আওয়ামী এমপি নেতাদের খুন করতে কসুর করেননি, যারা শেখ মুজিবুর রহমানের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন তারা এখন সরকারে খুব প্রভাবশালী, পোপের চেয়েও বড় খ্রিষ্টান। তারাই শেখ হাসিনার কাছে সব চেয়ে বিশ্বস্ত। প্রথম দিকে তোফায়েল আহমেদরা আফসোস করেছেন এই বলে যে, এত বছর আওয়ামী লীগ করার পর ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া-লেনিনদের অধীনে রাজনীতি করতে হবে! কিন্তু উপায় নেই। মন্ত্রিত্ব রাখতে শুধু মতিয়া-লেনিনের অধীনে নয়, শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎখাতের জন্য যুদ্ধ ঘোষণাকারীদের অধীনেও তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে।
রাজনীতির বোধ করি এটাই নিয়ম। এখানে স্থায়ী কোনো ‘বেড-পার্টনার’ নেই। ফলে শেখ হাসিনাকে কখনো জামায়াতের সাথে যেতে হয়, কখনো বিভ্রান্তকারী সিপিবির সাথে যেতে হয়। কখনো বা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতকদের সাথে নিয়েও তাকে সরকার পরিচালনা করতে হয়। কে জানে, রাজনীতির অন্ধি-সন্ধি সম্ভবত এ রকমই। কিন্তু এতে নিজস্ব রাজনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী কী প্রভাব পড়ে তা-ও ভেবে দেখার বিষয়।
বর্তমান সরকারের অনেক পদক্ষেপই হঠকারী। কিন্তু সে পদক্ষেপগুলো কে যে নিচ্ছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ছোটখাটো অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব। ধরা যাক, গত ৩ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার সার সংক্ষেপ কী? প্রথম দিকে শুরু হলো সংবিধান অনুযায়ী সব ব্যবস্থা। কথাটা মন্দ নয়। কিন্তু সেই সংবিধান কে সংশোধন করে একেবারে জন-আকাক্সক্ষার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিলো, কেন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করতে হলো, সেটিও তলিয়ে দেখা দরকার। পঞ্চদশ সংশোধনীর পেছনে কাজ করেছে জন-আকাক্সক্ষার বিপরীতে দাঁড়িয়ে চিরদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকার লিপ্সা। জনগণকে সরকারের এত ভয় যে, তারা আদালতের মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করিয়ে দিলেন। যদিও ওই প্রধান বিচারপতি এ কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, পরবর্তী অন্তত দুইটি নির্বাচন করা যেতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে।
কিন্তু বাতিলের রায়টি শেখ হাসিনার সরকারের কাছে বড় বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছিল। পরবর্তী দুইটি নির্বাচন তারা আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করতে চাননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনের নামে যে প্রহসন করলেন, তাতে দেশবাসী শুধু নয়, সারা পৃথিবী হেসেছে। এখনো হাসছে। মতিয়া-মেনন-ইনু-শাজাহান-লেনিনরা এখন ক্ষমতার মালিক-মোখতার। অথচ এরা সবাই উচ্ছিষ্টভোগী। আওয়ামী লীগকে এত বড় রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে এদের কোনো অবদানই নেই বরং এরা উইপোকার মতো ভেতর থেকে আওয়ামী লীগকে ক্রমেই আরো অনেক বেশি জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি টের পান কি না বলা মুশকিল। কারণ এখন মনে হচ্ছে তিনি যা বলছেন, সবাই হুক্কাহুয়া রবে সেই কথা বলছে এমন নয়। অনেক সময় মনে হয়, আওয়ামী লীগে আসা ঘুণপোকারা যা বলছে, তিনি তারই প্রতিধ্বনি করছেন। এটি যে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য অস্তিত্বের সঙ্কট সৃষ্টি করবে সেটি শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেন কি না বলতে পারি না। কিংবা এমনো হতে পারে যে, তারপর তার আওয়ামী লীগ থাকল কি থাকল না সেটি বোধ করি তিনি পরোয়াও করছেন না।
সরকার যে সরকারে নেই, তার অসংখ্য উদাহরণ আছে। দুই একটি উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে বিশ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে গেটে তালা দিয়ে, ইট-বালুর ট্রাক এনে সরকার অবরুদ্ধ করে ফেলে যেন তিনি কার্যালয় থেকে বেরই না হতে পারেন। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে নিজ কার্যালয় থেকে নয়াপল্টনে আসার উদ্যোগ নিলে তাকে কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়নি পুলিশ। উল্টো তার ওপর নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষাক্ত পেপার ¯েপ্র করেছে পুলিশ। এতে তিনি এবং সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতানেত্রীরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সরকার যে অবরোধ জারি করেছিল তিনি তার ধারাবাহিকতায় সেই অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশবাসী এই কর্মসূচিতে বিগত দুই মাস ধরে অব্যাহত সমর্থন জুগিয়ে আসছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনকি পাকিস্তান পর্বের রাজনৈতিক ইতিহাসেও কখনোই এমন ঘটনা ঘটেনি যে, দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রীকে এইভাবে হেনস্তা করা হয়। শেখ মুজিব জেলে ছিলেন বটে, কিন্তু যখন তিনি সুনির্দিষ্ট দাবিতে অনশন শুরু করেন তখন সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এইটুকু রাজনীতিক ভব্যতা এবং শিষ্টাচার আইয়ূব খান সরকারেরও ছিল। শেখ হাসিনা সরকারে এই ভব্যতা অন্তর্হিত।
৫ জানুয়ারি যখন বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হলো না, তখন তিনি পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন। সে অবরোধ চলছে। এই সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে সরকার বলদর্পী মনোভাব নিয়ে চলতে শুরু করল। নানান ইতর কটূক্তি তার বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকে চলতে থাকল। অরিজিনাল আওয়ামী লীগাররা যত না বললেন, তার চেয়ে অধিক বললেন হাইব্রিডেরা। এলাকায় যাদের কল্কি জোটে না এবং এসব হাইব্রিড এমন নির্লজ্জ দুর্নীতি করেছেন বর্তমান দুর্নীতিবান্ধব সরকার পর্যন্ত তাদের আর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়নি। ঠাঁই পাওয়ার আশায় তাদের যে লম্ফ-ঝম্ফ সেটা দেখার মতো বিষয়।
বেগম খালেদা জিয়া একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয়ায় সে অবরোধ চলতে থাকল। বিএনপিসহ বিশ দলীয় জোটের সব শীর্ষ নেতা কারাগারে। ওয়ার্ডপর্যায়ের কোনো নেতাও বাইরে নেই। স্থানীয় সরকারে যারা বিশ দলীয় জোট থেকে জিতেছিলেন, তারাও কারাগারে এবং তাদের নির্বাচন বাতিলের যাবতীয় আয়োজন সরকার করছে। সরকার যেমন অনির্বাচিত তেমনি অনির্বাচিতদের দিয়ে জনগণের রায় ভণ্ডুল করে স্থানীয় সরকার পরিচালনা করতে চাইছে। কার বুদ্ধিতে, কার চিন্তায় বলতে পারি না।
এর মধ্যে কতকগুল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল। তার একটি হলো গত ৩১ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ, ডিস লাইন, ইন্টারনেট ব্যবস্থা সব কিছু ‘থানার নির্দেশে’ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো। বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো তার অফিসের টিঅ্যান্ডটি সংযোগও। অর্থাৎ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বিনা কারণে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে সারা পৃথিবী থেকে, দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা এই যে, কেউই এর দায়িত্ব নিতে চাইল না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বললেন, আমি তো জানি না। হয়তো বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে, সে জন্য লাইন কেটে দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা বললেন, থানা থেকে আমাদের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে। তাই আমরা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। থানা বলল, তারা এসব বিষয়ে কিছুই জানে না। হাইব্রিড জাসদ এবং শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বললেন, বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিক-কর্মচারীরা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর ঘৃণাবশত ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। অর্থাৎ এক মগের মুল্লুক বাংলাদেশে চালু হয়েছে। এখানে কার নির্দেশে কখন যে কী হয় তো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। যার যখন যেখানে যা খুশি তাই করতে পারে। কার মন্ত্রণালয় কে চালায় সেটাও নিশ্চিত করে বলা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে বিজিবি-পুলিশ-র‌্যাব বাহিনীর প্রধানেরা যে ভাষায় কথা বলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল ক্ষমতা বোধ করি তারাই দখল করে নিয়েছেন। কবে নির্বাচন হবে, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে না হবে, এর সব কিছুই বলতে শুরু করেছিলেন এসব বাহিনী প্রধান। এরপর পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম তো বলেই বসলেন যে, যেসব কূটনীতিক বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলতে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন সারা দুনিয়া চিৎকার করে বলছে, সংলাপে বসতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চলবে না। ফলে বিষয়টিকে একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এখন দেখি সরকার বোধ করি খানিকটা খামোশই।
আওয়ামী নেতাদের মুখে শুনছি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভয় পায় না। সে কারণেই তারা নাকি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিচ্ছে। এর চেয়ে মজার ব্যাপার আর কিছুই হয় না। সিটি করপোরেশন নির্বাচন কোন কবুরে অবস্থা আওয়ামী লীগ দিচ্ছে, তা কারো কাছে অজানা নেই। বিরোধী দল থেকে মেয়র তো পরের কথা, এমনকি একজন ওয়ার্ড কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কেউ হাজির নেই। এই লেভেলের লোকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দিয়ে হয় তাদের গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছে অথবা দৌড়ের ওপর রাখা হয়েছে। নির্বাচন হয়তো হবে, কিন্তু বিরোধী দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কে করবে তার কোনো হদিস নেই।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতা, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি এখন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় জেলে আছেন। তা ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দল থেকে যারা জিতেছিলেন সরকার তাদের ধারাবাহিকভাবে আটক করে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। তাদের জায়গায় নিজ দলীয় লোকদের বসিয়ে দিচ্ছে। এমনই এক নিকৃষ্ট গণতন্ত্রের নজির বাংলাদেশে স্থাপিত হতে চলেছে। এখানে যে কিছুতেই একদলীয় সরকার স্থাপন করা যাবে না, সে সত্য যদি সরকার উপলব্ধি করত তাহলে দেশ জাতির যেমন কল্যাণ হতো, তেমনি তারা নিজেরাও জনতার রুদ্ররোষ থেকে রক্ষা পেতে পারত।
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.