গান্ধী ইংরেজদের এজেন্ট ছিলেন -বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু

এবার বড়সড় বিতর্কের মুখে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু। নিজের ব্লগে মহাত্মা গান্ধীকে ব্রিটিশদের এজেন্ট বলে দাবি করলেন তিনি। তাঁর মতে দেশের প্রভূত তি করেছেন গান্ধী।
নিজের ব্লগে কাটজু লিখেছেন:
আমি জানি এই ব্লগ লেখার পর সবাই আমার সমালোচনা করতে উঠে পড়ে লাগবে। তাতে অবশ্য আমার বিশেষ কিছু যায় আসে না। আমি জনপ্রিয়তার পিছনে ছুটি না। আগেও আমার বেশ কিছু মন্তব্য আমাকে অনেকের কাছে অপ্রিয় করে তুলেছে। কিন্তু দেশের স্বার্থে আমার বিশ্বাস জনসমে প্রকাশ করতে আমি মোটেও পিছ পা হব না। আমার মতে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের এজেন্ট ছিলেন, যিনি দেশের বহু তি করেছেন।
আমার এই ধরণের বক্তব্যের পিছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।
১) ভারতে চিরকালই ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভাষার বিপুল বৈচিত্র রয়েছে। ব্রিটিশরা চিরকালই এদেশে ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি চালাতে চেয়েছে। ব্রিটিশদের উদ্দেশ্য জেনেও দশকের পর দশক ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মকে রাজনীতির মধ্যে টেনে এনে গান্ধী আসলে ইংরেজদের পলিসি স্বার্থক করতে চেয়েছিলেন।
১৯১৫ সালে দণি আফ্রিকা থেকে এদেশ ফিরে আসার পর থেকে ১৯৪৮ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত গান্ধী তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে প্রতিটি লেখায় হিন্দু ধর্মের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। হিন্দু ধর্মীয় ভাবনা যেমন রামরাজ্য, গো রা, ব্রহ্মচর্য, বর্ণাশ্রম ইত্যাদিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।
১৯২১ সালে ইয়ং ইন্ডিয়াতে গান্ধী লিখে ছিলেন ''আমি একজন সনাতনী হিন্দু। আমি বর্ণাশ্রম ধর্মে বিশ্বাস করি। গো মাতাকে রা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।''
গান্ধীর যে কোনও জনসভায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে 'রঘুপতি রাঘব রাজা রাম' গাওয়া হত।
ভারতে চিরকালই ধর্মের বাড়বাড়ন্ত ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে এই নিয়ে মাতামাতির অন্ত ছিল না। একজন সাধু বা স্বামীজী তাঁর আশ্রমে যদি শিষ্যদের এই ধরণের বক্তব্য বলতেন তাও খানিক মানা যেত। কিন্তু দিনের পর দিন একজন রাজনৈতিক নেতা যখন এই ধরণের মন্তব্য করে যান তার ফলাফল অনেক মারাত্মক হয়। একজন গোঁড়া মুসলিমের মনে এই ধরণের মন্তব্য কী প্রতিক্রিয়া ফেলেছিল সেই সম্পর্কে কি কোনও ধারণা আছে? এই ধরণের মন্তব্য তাঁকে মুসলিম লিগের মত ধর্মীয় সংগঠনের দিকেই ঠেলে দিয়েছিল। ইংরেজদের কি এটাই উদ্দেশ্য ছিল না? রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে দিয়ে গান্ধী কি ব্রিটিশদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেননি?
২) ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা মূলত বিংশ শতকের প্রথমভাগে। অনুশীলন সমিতি, যুগান্তরের মত সংগঠনগুলির পাশাপাশি সূর্য সেন, রামপ্রসাদ বিসমিল, চন্দ্র শেখর আজাদ, আসফাকুল্লা, ভগৎ সিং, রাজগুরুর মত বিপ্লবীরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত দেশ গড়ার জন্য নিরলস আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। গান্ধী সাফল্যের সঙ্গে সত্যাগ্রহের নামে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিমুখ অর্থহীন এক দিকে চালিত করেছিলেন। যাতে আখেরে লাভবান হয়েছিল ইংরেজরাই।
৩) গান্ধীর সমস্ত অর্থনৈতিক চিন্তা চূড়ান্তভাবে প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। তিনি স্বনির্ভর গ্রাম্য সমাজের হয়ে ওকালতি করতেন। যদিও সবাই জানতেন যে এই ধরণের সমাজে ভীষণভাবেই জাত পাতের ভেদাভেদ ছিল। মূলত জমিদারদের দখলে ছিল সেই সময়কার গ্রামীণ সমাজ। তিনি সম্পূর্ণভাবে শিল্পায়নের বিরোধী ছিলেন। চরকার সুতো কাটার মত বোকাবোকা কিছু প্রচার তিনি চালিয়ে ছিলেন। একই সঙ্গে তাঁর 'ট্রাস্টিশিপ' থিওরিও এক্কেবারে অর্থহীন আর ছলনাপূর্ণ ছিল। দেশভাগের সময় নোয়াখালিতে গান্ধীর পৌছে যাওয়াকে অনেকে তাঁর সাহসিকতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। দিনের পর দিন জনমানসে রাজনীতির মোড়কে ধর্মীয় ভাবনা প্রচার করে তিনি আসলে ধর্মীয় ভাবনা প্রচার করেছেন। তাঁর বক্তব্য ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয়দের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছিল। প্রথমে তুমি বাড়িতে আগুন লাগাতে ইন্ধন জোগাবে, তারপর সেই আগুন নেভাবার নাটক করবে, এই দ্বিচারিতা মেনে নেওয়া যায় না।
সূত্র : জি নিউজ

No comments

Powered by Blogger.