ভারতের চেয়ে বেশি পারমাণবিক বোমা পাকিস্তানের! দক্ষিণ এশিয়ায় পরমাণু প্রতিযোগিতা বিপজ্জনক

পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১২০টি। ভারতের চেয়েও ১০টি বেশি। গত বছরের হিসেব এটি। 'অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট'এর 'বুলেটিন'-এ এক তথ্যচিত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।
'বুলেটিন'-এর প্রতিষ্ঠাতা ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর একদল বিজ্ঞানী। ১৯৪৫ সালে যাত্রা শুরু হয় এটির। ম্যানহাটেন প্রকল্পে প্রথম পারমানবিক অস্ত্র তৈরীতে সহায়তাও করেছিলেন এই বিজ্ঞানীরা। বহু দিন ধরেই তারা বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর নয়টি দেশের অস্ত্রের হিসেব নিকেশ করে আসছেন।
আশির দশকে বিশ্বের পারমাণবিক ওয়্যারহেডের সংখ্যা পৌঁছেছিল ৬৫ হাজারে। সংখ্যাটা তাদের হিসেবে হাজার দশের কমেছে। কিন্তু অস্ত্রধারী দেশের সংখ্যা বেড়েছে।
তাদের তথ্যমতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়েরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ৫ হাজার করে। এছাড়া ফ্রান্সের ৩০০টি, চীনের ২৫০টি, যুক্তরাজ্যের ২২৫টি এবং ইসরাইলের ৮০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে মাত্র ২০০৬, ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দক্ষিণ এশিয়ায় পরমাণু প্রতিযোগিতা বিপজ্জনক
দক্ষিণ এশিয়া ‘বিপজ্জনক’ পরমাণু প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে বলে সতর্কবার্তা জানিয়েছে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। পরাশক্তির হওয়ার লড়াইয়ে ‘অস্থিতিশীল’ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে চীন-ভারত ও পাকিস্তানকে ঘিরে। সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচিতে নতুন পরমাণু চুল্লি চালু ও চীনের ৫৮ গিগাওয়াট পরমাণু পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আশংকা করেছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। চীন দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র না হলেও আঞ্চলিক ভূমি বিরোধ ও সীমান্তবর্তী সন্ত্রাস ঝুঁকিতে এই প্রক্রিয়ার অনিবার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এএনআইয়ের বরাত দিয়ে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সোমবার এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন (সিএফআর) এক গবেষণায় জানায়, আঞ্চলিক সংঘাত ও পরমাণু ডকট্রিনে দক্ষিণ এশিয়ার ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ‘দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গবেষকরা জানায়, পরমাণু প্রতিযোগিতার অস্থিতিশীল লড়াইয়ে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পরমাণু ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত নিরাপদ থাকলেও আঞ্চলিক সন্ত্রাসী হামলা পরিস্থিতি আমূলে বদলে দিতে পারে। ঘরেবাইরে জঙ্গি তৎপরতায় জর্জরিত ইসলামাবাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করাচিতে নতুন পরমাণু চুল্লি চালুতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পপ্রবণ এই এলাকায় এ ধরনের সংবেদনশীল স্থাপনা যে কোনো মুহূর্তে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। এছাড়া আল কায়দা বা তালেবান জঙ্গি হামলার আশংকার কথা তো বলাই বাহুল্য। করাচি থেকেই এর আগে আল কায়দা পাক নৌবাহিনীর জাহাজ ছিনতাই করেছিল। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন বলছে, ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসম্পন্ন এই চুল্লি করাচির অধিবাসীদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
এদিকে, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তিতে উদ্বেগে রয়েছে চীন। দেশটি তার পরমাণু সক্ষমতা বাড়াতে ২০২০ সালের মধ্যে ৫৮ গিগাওয়াট পরমাণু জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। বর্তমানে বেইজিংয়ের পরমাণুচালিত চুল্লির উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ২০ গিগাওয়াট। ইউনিট ৫ ও ৬ পরমাণু চুল্লির অনুমোদন নতুন চন্দ্রবর্ষ শুরু আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষায় ইসলামাবাদকে পরমাণু সহায়তা দিচ্ছে বেইজিং। জ্বালানি ঘাটতিতে থাকা পাকিস্তানে দুটো পরমাণু চুল্লি বসাবে চীন। করাচির ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পরমাণু চুল্লি স্থাপন ও চীনের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু প্রযুক্তি সহায়তায় উদ্বেগ জানিয়েছে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। মার্কিন দূতাবাস বৃহস্পতিবার এব বিবৃতিতে বলেছে, বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতায় ইসলামাবাদকে ঘিরে বেইজিংয়ের সম্প্রসারিত কার্যক্রমে আমরা উদ্বিগ্ন। এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও প্রকাশ্য করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
সিএএফআরের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে জে টেলিস বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পরমাণু শক্তির ওপর নিভর্রতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.