পুলিশ কাছেই ছিল সাহায্য করেনি, এত ভীড়ে এমন হামলা কল্পনার বাইরে: অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী

(অমর একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাতে খুন হন অভিজিৎ রায়। আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তোলা ছবি।) বাংলাদেশে আততায়ীর হামলায় নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদ হামলার ঘটনা নিয়ে এই প্রথম কোনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন।
নিরাপদ এক স্থান থেকে বিবিসির সাথে কথা বলেছেন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রাফিদা বন্যা আহমেদ।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ হত্যার সেই দিনটির স্মৃতিচারণ করছিলেন তিনি।
২৬শে ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আততায়ীরা অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করার পর একজন আলোকচিত্রী যখন সেদিন তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বারবারই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন বন্যা।
হাসপাতালে প্রথম জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার সারা গায়ে রক্ত এবং একটি বুড়ো আঙ্গুল হারিয়েছেন বন্যা।
হাসপাতালে নেবার পর অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন বলে কথিত শফিউর রহমান ফারাবি নামে এক ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
হামলার আগে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল।
এসব হুমকিকে তারা কতটুকু গুরুত্বের সাথে দেখতেন এমন প্রশ্নে তার স্ত্রী বলছিলেন, হত্যার হুমকি মূলত: ছিল ফারাবি নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে।
নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিকে ‘ব্লক’ করার কথাও জানান বন্যা।
তিনি বলেন, এধরনের হুমকি অনেক বুদ্ধিজীবী ও লেখককেই দেয়া হয়েছে যার দু’একটিই এপর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে।
হত্যার হুমকি নিয়ে বাংলাদেশে এসে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভেবেছিলেন বলে উল্লেখ করেন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী।
কিন্তু বই মেলা থেকে টিএসসির মোড় পর্যন্ত এইটুকু পথে এত মানুষের মধ্যে এরকম একটি হামলা হতে পারে বলে এটি তাদের কল্পনার বাইরে ছিল বলেই জানালেন রাফিদা বন্যা আহমেদ।
পুলিশ কাছেই ছিল সাহায্য করেনি
দুষ্কৃতকারীদের হামলার সময় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন নিহত ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, তার ও তার স্বামীর ওপর হামলার সময় তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাননি। তার ভাষায়, আমি ও অভিজিৎ যখন নিষ্ঠুর হামলার শিকার হচ্ছিলাম, স্থানীয় পুলিশ আমাদের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক  সংস্থা সেন্টার ফর এনকোয়ারি (সিএফআই) বিবৃতিটি প্রকাশ করে। সেখানে বন্যা লিখেছেন, আমার স্বামী অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ নিয়ে লেখালেখি করেছেন। তিনি ধর্মীয় মৌলবাদের সমালোচনাও করেছেন। এর কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার স্ত্রী, সহকর্মী লেখক ও মুক্তমনা হিসেবে আমি এ ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, ওই হামলা কেবল একজন মানুষের ওপরই ছিল না, ছিল সমগ্র মানবতা ও বাকস্বাধীনতার ওপর হামলা। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামপাস ঐতিহাসিকভাবেই প্রগতিশীল আন্দোলনের স্থান। অনেকবার হুমকি পেলেও আমরা কল্পনাও করতে পারিনি, এরকম জায়গায় এমন ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে খুনিদের ধরে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের দাবি জানান। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধের আহ্বান জানাই। এখানে লেখকরা নিহত হন, কিন্তু হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয় না। আমি পুরো বিশ্বের প্রতি আমাদের বিচারের দাবির সঙ্গে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.