গা বাঁচিয়ে আন্দোলনের চেষ্টা জামায়াতের by আহমেদ জামাল

যতটা সম্ভব গা বাঁচিয়ে আন্দোলনের চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য চলমান আন্দোলনে এখনও পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করছে না তারা। যেখানে যেভাবে পারছে আত্মরক্ষামূলক কর্মসূচি পালন করে সময় পার করছে নেতাকর্মী সমর্থকরা। দলীয় নেতাকর্মীদের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি যথাসাধ্য সীমিত রাখতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রের অভিমত। তবে কৌশলগত কারণে বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নয় কেউ। এব্যাপারে জামায়াতের সহকারী প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সংলাপ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন ২০দলীয় জোটের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের আলাদা কোন কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চলমান আন্দোলন মনিটরিং করছেন। জোটের অংশীদার হিসেবে তার যে কোন নির্দেশনা পালনে সক্রিয় রয়েছে জামায়াতও। সুতরাং জোটবদ্ধ আন্দোলনের বাইরে বাড়তি কিছু করতে পারে না জামায়াত। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদায়ী বছরের আন্দোলনে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সীমাহীন। বিশেষ করে দলটির নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা এবং ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধে রাজধানী ছাড়াও দেশের অন্তত ২৬টি জেলায় জামায়াত-শিবিরের সর্বাত্মক আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি হয়। সম্পদের ক্ষতিও হয়েছে প্রচুর। তাই এবারের আন্দোলনে জামায়াত অনেকটা সাবধানী ভূমিকায় আছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনাও তাই। যার কারণে সম্প্রতি মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় দলের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুস সুবহানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ হওয়ার পরও বেশ নির্বিকার থাকে নেতাকর্মী সমর্থকরা। অবশ্য এতে খুব একটা গা বাঁচানো যাচ্ছে না বলেও কেউ কেউ মনে করেন। কারণ ৫ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লাগাতার আন্দোলনে ইতিমধ্যে ক্রশফায়ারসহ নানা ঘটনায় জামায়াত শিবিরের ৯ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ৫ হাজার। আহত হয়েছে শ’ শ’ নেতাকর্মী-সমর্থক। এ পর্যায়ে রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঢাকাকে টার্গেট করছে তারা। এ জন্য রাজধানীর সকল জনশক্তিকে যে কোন কর্মসূচি পালনে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি স্বীকার করে বলা হয়েছে, ৫ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া চলমান আন্দোলনে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত হয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে রাজধানীর বাইরের জনজীবন। যৌথবাহিনীর অভিযানসহ সরকারের নানামুখী তৎপরতা আন্দোলন বানচাল করতে পারেনি। বরঞ্চ প্রতিদিন আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। তবে সে তুলনায় রাজধানীতে তেমন প্রভাব পড়েনি। তাই ঢাকাকেন্দ্রিক জোরালো আন্দোলনের কর্মসূচি চায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও। এ জন্য অচিরেই ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনের গতি বাড়াতে চান দলটির নীতিনির্ধারকরা। এব্যাপারে জামায়াতের সহকারী প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোন সময় যে কোন জায়গায় আন্দোলনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। সে অনুযায়ী আন্দোলন চলছে। জোট ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিলে জোটের ব্যানারেই তা পালন করা হবে। ওদিকে রাজধানীর রমনা থানা জামায়াতের দায়িত্বশীল সদস্য জানান, চলমান আন্দোলনে বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রায় শতভাগ সফল বিরোধী জোট। বাকি আছে কেবল ঢাকা। এবার ঢাকাকে আয়ত্তে আনতে হবে। জোটের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। অচিরেই ঢাকাকেন্দ্রিক সরব কর্মসূচির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এ পর্যায়ে চলমান আন্দোলনকে সরকার পতনের একদফায় নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। এ জন্য অবরোধ-হরতালের পাশাপাশি এবার অসহযোগ, গণমিছিল-মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে জোটের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে জোটের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে চলমান কর্মসূচি সফল করতে মিছিল-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদেরও মাঠে নেমে আসার সম্ভাবনা আছে। সূত্রমতে, ২০দলীয় জোটের এবারের টার্গেট ঢাকায় সফল হওয়া। শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপ এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া না হলে সারা দেশ থেকে রাজধানীকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর হামলা-মামলা, গুম ও গ্রেপ্তারের আশঙ্কা বিবেচনায় রেখেই মাঠে নামবেন সরকারবিরোধীরা। সূত্র মতে, যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে এবার আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে চায় সরকারবিরোধী জোট। এ জন্য ইতিমধ্যেই ঢাকার প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে বিএনপি-জামায়াতের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, জোটে থাকা অন্যান্য শরিক দলগুলোর সব পর্যায়ের নেতাদেরকে মাঠে নামানোর নির্দেশ দিয়েছেন জোটের নীতিনির্ধারকরা। তবে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়া হলে আন্দোলন ভিন্ন মাত্রায় রূপ নেবে দাবি করে বলা হয়, জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রেখে ক্ষমতাসীনরা মনে করেছিল জনগণের আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। দিন যত এগোচ্ছে আন্দোলনের গতিও বাড়ছে। টানা অবরোধের পাশাপাশি হরতালও পালিত হচ্ছে। আগের  চেয়ে আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। আন্দোলন এমন একটি অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যার ফলে, সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে রাতের বেলায় পরিবহন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বাধ্য হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে জোটের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও আন্দোলন জোরদার করার পক্ষে। তারা এখন সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চান। সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বিনা বিচারে হত্যা করার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে অসহযোগ আন্দোলনও চান কেউ কেউ। তবে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে জোটের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে ২০ দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসবেন এবং সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে না যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এ পর্যায়ে চলমান গণআন্দোলনকে চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে চলছে গণগ্রেপ্তার এবং প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর। এক কথায় সরকার দেশে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দেশকে বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। এ জন্য সরকারকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.