গেইল বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণ আর কাকে বলে! দিনভর ‘টক অব দ্য ক্রিকেটওয়ার্ল্ড’। অবাক বিস্ময়ে বিমোহিত ক্রিকেট বিশ্ব। রেকর্ডবুক ছিন্নভিন্ন করা ইনিংস। নানা সমালোচনার জবাব এমন এক ডাবল সেঞ্চুরিতে দিবেন তা ভাবতেও পারেন নি কেউ। এক ঢিলে যেন দুই পাখি শিকার। নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করা হলো আবার নিজেকে স্মরণীয় করেও রাখা হলো। বিশ্বকাপ ক্রিকেট যতদিন থাকবে ততদিন এই বাঁ-হাতিকে স্মরণ রাখতে হবে। বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি বলে কথা! সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ডও। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার মানুকা ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস জিম্বাবুয়ের বোলারদের নিয়ে ছেলে খেলাই করেছে। শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর থেকে মাঠ কাঁপিয়ে খেলতে খেলতে এই দু’জন বিচ্ছিন্ন হন ইনিংসের শেষ বলে ৩৭২ রান সংগৃহীত হওয়ার পর। এর আগে ওয়ানডে ইতিহাসে কোন খেলায় কোন জুটি এত রান করতে পারেনি। গেইল ২১৫ রান করে আউট হওয়ার পথে মাত্র ১৩৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ওয়ানডেতে এটি পঞ্চম ডাবল সেঞ্চুরি হলেও এত কম বলে কেউ করতে পারেন  নি। তবে তিনি ঝরে বক মেরেছেন তাও নয়। এত কম বলের ইনিংসেও ৫৯ বলে কোন রান নিতে পারেন নি তিনি। আর ভারতীয়দের বাইরে তিনিই প্রথম এ মাইলফলক স্পর্শ করলেন। আগের চারটির দুটিই আসে রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে। শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দর সেওয়াগের ব্যাট থেকে আসে বাকি দুটি। মজার ব্যাপার হলো, ঠিক ৫ বছর আগের এই দিনে শচীন প্রথম ওয়ানডের এই নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছিলেন। ১৪৫ বলের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ১৬টি ছক্কার রেকর্ডও স্পর্শ করেন। চার মারেন ১০টি। স্যামুয়েলস অপরাজিত থাকেন ১৩৩ রান করে। তবে প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন তিনি। পানিয়াঙ্গারার বল তার পায়ে লাগলেও আম্পায়ার তাকে লেগবিফোর উইকেট আউট দেন নি। বোতলবন্দি বিস্ফোরককে যদি কেউ তার কার্যকারিতা ফুরিয়ে গেছে মনে করে নাড়াচাড়া করতে যায় তবে পরিণতি ভয়াবহ তো হবেই। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিশেষ করে গত ছয় মাসে কোরি অ্যান্ডারসন থেকে শুরু করে রোহিত শর্মা, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম অনেক মারকুটে ব্যাটিং দেখিয়েছেন। বিশ্বকাপের আগ দিয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্স কি তাণ্ডবই না চালিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর বিশ্বকাপে ডেভিড মিলারের ৯২ বলে ১৩৮ ও ম্যাককালামের ২৫ বলে ৭৭ ইনিংসও দেখেছে সবাই। কিন্তু সব ছাপিয়ে সবার মনোযোগ নিজের দিকে টেনে নিলেন ক্রিস গেইল। বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে। অনেক দিন ধরেই তেমন রান পাচ্ছিলেন না। সর্বশেষ শতরান করেছেন ২০১৩ সালের জুনে। এই ১৯ মাসে একটি মাত্র (৫৮) ফিফটি করেন গত আগস্টে, বাংলাদেশের বিপক্ষে। মোট ২৭৪ রান করেন মাত্র ১৪.৪২ গড়ে। তাই অনেক চাপে ছিলেন কিছু একটা করে দেখাতে। হ্যাঁ, এই একটি বিস্ফোরক ইনিংসে অনেক চাপমুক্ত হলেন ক্রিস গেইল। নিজেই বললেন এ কথা। জ্যামাইকার এই পাগলাটে ওপেনার বলেন, রোহিত শর্মা দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার পর থেকেই অনেকেই টুইট করে আমার কাছে ডাবল সেঞ্চুরি প্রত্যাশা করেন। রান আসছিল না, অনেক চাপে ছিলাম। ক্যারিয়ারে আর কখনও এমন হয়নি। মানুষ আমার ব্যাটে কেবল রান চাচ্ছিল। এই প্রথম আমি দেখলাম মানুষ চাইছে আমি যেন ভাল খেলি। তাই আমি আনন্দিত যে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি।’ গেইল বলেন, চার ফিল্ডার নিয়ম চালু হওয়ার পর আমি একটি হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছি। অথচ এখন রান করা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে।’ বলেন, আমি সত্যিই খুশি। শুরুর দিকে বেশ কষ্ট হচ্ছিল রান নিতে। চেষ্টা করেছি টিকে থেকে রান নিতে। তিনি স্বীকার করেন যে, প্রথম ওভারেই লেগবিফোর উইকেট আউট হওয়া বেঁচে যান তিনি। এতেই ডাবল সেঞ্চুরি করার সুযোগ তৈরি হয়। আমি প্রথম বলেই আউট হতে পারতাম।

No comments

Powered by Blogger.