ভিভিআইপিসহ মন্ত্রী, এমপিদের নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ by দীন ইসলাম

ভিভিআইপিসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, এমপি, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করেছে দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে ‘২০ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ আন্দোলন এবং সরকারের করণীয়’- শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ সুপারিশ করেছেন তারা। সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিবেদনে পেট্রলবোমা ও ককটেল সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করে ‘কৌশলে গণধোলাই’ এর ব্যবস্থা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক  মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণধোলাইয়ের বিষয়টি ঠিকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে। বিশেষ প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে বলা হয়েছে, ২০ দলীয় সন্ত্রাসী ও মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। এছাড়া বিএনপি জামায়াতের সরকারবিরোধী প্রপাগাণ্ডার বিপরীতে সুনির্দিষ্ট তথ্য, উপাত্ত ও যুক্তির মাধ্যমে সরকারের প্রকৃত অবস্থান সাধারণ জনগণের কাছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তুলে ধরতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টাকে চিঠি দেয়া হবে। এজন্য কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এদিকে প্রতিবেদনে চার মন্তব্যে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নামে হরতাল বা অবরোধ দীর্ঘ হলে দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। তাই এখনই সন্ত্রাসী চক্রের দমন না করা গেলে পেট্রলবোমা, ককটেল হামলা, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ ভয়াবহ নাশকতা দিন দিন বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট ও নিষিদ্ধা জঙ্গি সংগঠন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদ্যুৎ স্টেশন, পেট্রল পাম্প, রাজনৈতিক ও প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ এবং ট্রাইব্যুনালে নিয়োজিত বিচারকদের উপর হামলা পরিচালনা করে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারবিরোধী সূক্ষ্ম  প্রপাগাণ্ডা সারা দেশে প্রচার করে সরকারের অনুগত বিভিন্ন বাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেয়ার পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মীদের নাশকতার দিকে উদ্বুদ্ধ করার অপপ্রয়াসে সচেষ্ট রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩০শে জানুয়ারি খালেদা জিয়ার বিএনপি গুলশানস্থ কার্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিনের পর এবং সারা দেশে হরতাল আহ্বানের পর থেকে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। সারা দেশে কয়েক দিনের সহিংস ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ২৯শে জানুয়ারি ১০টি জেলায় ৩০টি ককটেল/পেট্রলবোমা, ১০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে আটজন আহত ও একজন নিহত হয়। এর পরদিন অর্থাৎ ৩০শে জানুয়ারি ৭টি জেলায় ২১টি ককটেল/পেট্রলবোমা নিক্ষেপ এবং ১৬টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ৯ জন আহত হন। ৩১শে জানুয়ারি ১০টি জেলায় ৩২টি ককটেল/পেট্রলবোমা, ১৯টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে চার জন আহত ও একজন নিহত হন। ১লা ফেব্রুয়ারি ১৮টি জেলায় ৮৫টি ককটেল/পেট্রলবোমা, ৪০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জন আহত ও দুই জন নিহত হন। বিশেষ প্রতিবেদনে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে ব্যাপকহারে নাশকতার পাশাপাশি দেশ ও বিদেশে বর্তমান সরকারকে হেয় করতে বিভিন্ন মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা, গুজব ছড়াচ্ছে। সমপ্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং- এর বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে গুজব ছড়িয়ে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার ব্যাপারে জামায়াত-বিএনপি সচেষ্ট রয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপি ভারতের বিজেপি দলের সভাপতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথোপকথনের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে এবং আমেরিকান ১০ জন কংগ্রেসম্যানের ভুয়া বিবৃতি প্রকাশ করে সরকারকে বিব্রত করার পাশাপাশি সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নাশকতার দিকে আরও উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া গুলশানস্থ বিএনপি কার্যালয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগ বিচ্ছিনের পর পুনরায় সংযোগ দিলে বিএনপি বহির্বিশ্বের চাপে সরকার পুনঃসংযোগ দিতে বাধ্য হয়েছে মর্মে প্রচার করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারের অবস্থান অত্যন্ত নড়বড়ে বলে সারা দেশে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। এদিকে জামায়াত- শিবির নানা কৌশলে বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোকে এক প্লাটফর্মে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলনসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে অর্থ-বিত্তের প্রলোভন দেখিয়ে কাছে টানছে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং ঢাকা মহানগর প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আবদুল্লাহ ওয়াছেলসহ অনেকের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। হেফাজতের অপর গ্রুপ ঢাকা মহানগর হেফাজতের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসেন কাশেমী ও সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের সুসম্পর্ক রয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। পাশাপাশি হিযবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আইএস, আল্লার দল, শাহাদৎ-এ-ইকমাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে শিবির যোগাযোগ করে তাদেরকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

No comments

Powered by Blogger.