কোনোভাবেই সচল রাখা যাচ্ছে না পরিবহন সেক্টর by আবু সালেহ আকন

কোনোভাবেই সচল রাখা যাচ্ছে না পরিবহন সেক্টর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের প্রহরার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখের সামনেই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। পরিবহন সেক্টরকে সচল করতে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে তিনজন পরিবহন নেতা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পাঁচজন মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে পরিবহন সেক্টর সচল রাখতে আরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি আনসার সদস্যদের মোতায়েন করার কথাও বলা হয় বৈঠকে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা বলেছেন, যেভাবে নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে তাতে পরিবহন সেক্টর সচল রাখা সম্ভব না। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতোমধ্যে দেড় হাজারের ওপরে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। হতাহত হয়েছেন বেশ কিছু পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল চাঁদপুরে নিহত হয়েছেন এক ট্রাক হেলপার। ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের মধ্যে ৪০০-এর মতো গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তুম আলী খান বলেন, পরিবহন সেক্টরকে সচল করতে হলে আরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেও চোরাগোপ্তাভাবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। দেখা যায় রাস্তার পাশ থেকে হঠাৎই হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাচ্ছে এই সেক্টরকে সচল রাখতে। তিনি বলেন, কোনো কোনো এলাকায় সচল থাকলেও সব এলাকায় সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না।  বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মাহমুদুল আলম মন্টু বলেন, শ্রমিকেরা রিস্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে রাজি নন। তিনি বলেন, সরকার যেভাবে নিরাপত্তা দিচ্ছে তাতে কাজ হচ্ছে না। ভয়ে অনেকেই গাড়ি নিয়ে এখন আর রাস্তায় নামছেন না। যাদের একেবারেই কোনো উপায় নেই তারা জীবনের রিস্ক নিয়ে রাস্তায় নামছেন। আবার কেউ কেউ দেখা যায় গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আবার ফিরে আসছেন। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহন সেক্টরের অপর এক নেতা বলেন, এভাবে পরিবহন সেক্টর সচল রাখা যায় না। দীর্ঘ রাস্তায় কোনোভাবেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না। দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩০-৪০টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে যাত্রা শুরু করল। পথে যেকোনোভাবে একটি গাড়ি অচল হয়ে পড়তে পারে। তখন ওই গাড়িটির জন্য হয়তো পুরো বহর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। না হলে ওই গাড়িটিকে বিপদের মধ্যে ফেলে চলে যেতে হবে। ওই নেতা বলেন, এভাবে একটি বিশাল সেক্টর সচল রাখা সম্ভব নয়।  অপর এক নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিবহন সেক্টরের সাথে বেশ কয়েকটি মিটিং করছে। পরিবহন সেক্টরের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিবহন সেক্টর সচল রাখা সম্ভব না। এ দিকে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী বলেছেন, ২৪ দিন পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বোধোদয় হলো মিটিং করার ব্যাপারে। তিনি বলেন, এভাবে পরিবহন সেক্টর সচল রাখা সম্ভব না। নিরাপত্তা যে পরিমাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ১৫ জন শ্রমিক মারা গেছেন। তারা মারা গেলে লাশ পরিবহনেরও টাকা পাওয়া যায় না। ২০১৩ সালে ৫৬ জন শ্রমিক মারা গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মাত্রা ৩৭ জনের জন্য ৯৬ লাখ টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় পরিবহন শ্রমিকেরা খুবই ভয়ের মধ্যে আছেন। যারা গাড়ি চালাচ্ছেন তারা খুবই রিস্কের মধ্যে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.