অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ পেট্রলবোমা হামলার জবাব নয়: অ্যামনেস্টি

সম্প্রতি একের পর এক ভয়াবহ পেট্রলবোমা হামলার জবাবে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে পুলিশকে দায়মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার দেশটিতে এরই মধ্যে বিরাজমান সহিংস পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন। চলমান সহিংস রাজনৈতিক বিক্ষোভের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দেয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘বাংলাদেশ: এক্সেসিভ পোলিস ফোর্স নট দি অ্যানসার টু হরিফিক পেট্রল  বম অ্যাটাকস’ অর্থাৎ ‘পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ভয়াবহ পেট্রল  বোমা হামলার জবাব নয়’ - শিরোনামে গতকাল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত দুই ডজনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের হামলা বন্ধে ‘যখন এবং যেখানেই প্রয়োজন মনে হবে, সরকার প্রধান হিসেবে আমি (পুলিশকে) যে কোন ব্যবস্থা নেয়ার স্বাধীনতা দিচ্ছি’। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত বল প্রয়োগে বা এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটাতে এ ধরনের মন্তব্য পুলিশকে উন্মুক্ত আমন্ত্রণবার্তা পাঠানোর উচ্চ ঝুঁকি বহন করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীসমূহ অতীতে এ ধরনের ঘটনা ভয়াবহ মাত্রায় ঘটিয়েছে। পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানগুলোতে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ অভিযানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নেরও (র‌্যাব) সম্পৃক্ততা রয়েছে। অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি গত ১২ থেকে ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে যে প্রাণহানির ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোকে ‘গুলি চালিয়ে হত্যা’ বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ। আব্বাস ফয়েজ বলেন, পুলিশি অভিযানের সময় এ প্রাণহানির ঘটনাগুলো- যার মধ্যে কিছু ঘটনা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হিসেবে পরিগণিত হতে পারে- সে ঘটনাগুলোর অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত হতে হবে এবং দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীসমূহের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। কিন্তু, এটা তাদের আইনের ঊর্ধ্বে রাখে না এবং অতিরিক্ত বল প্রয়োগের আশ্রয় নেয়া কখনোই কোন অজুহাত হতে পারে না। আব্বাস ফয়েজ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও মানদ-ে পুলিশ শুধু সেই শক্তি প্রয়োগ করতে পারে, যা নিতান্তই অপরিহার্য এবং ততোটা প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাঁচার অধিকারকে তাদের সব সময় সম্মান করতে হবে এবং আহত ও প্রাণহানির ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রাণঘাতী প্রয়োগের অনুমতি তখনই দেয়া যাবে, জীবন বাঁচাতে যখন তা একান্তই অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে আব্বাস ফয়েজ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) উচিত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব অপরাধ কর্মকা- বন্ধে তাদের কর্মী ও সমর্থকদের আহ্বান জানানো। অপরাধ আইনে এ কর্মকা-সমূহকে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা উচিত। সব পক্ষের উচিত জনসমক্ষে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার নিন্দা জানানো এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে যে কোন তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে তাদের সমর্থকদের উৎসাহিত করা।

No comments

Powered by Blogger.