সমাধান আলোচনার টেবিলে by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

নানা প্রশ্নে নানা মত। কেউ সাদাকে সাদা হিসেবে মেনে নিলেও কেউবা চোখ বুজেই এর বিরোধিতা করছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি যে ভাল নেই তা মানছেন সকলেই। কেউ হয়তো সহজেই মেনে নিচ্ছেন, কেউবা মানছেন একটু ঘুরিয়ে। কি হতে পারে উত্তরণের উপায়- মানবজমিনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল সিলেটের সুধীজন-রাজনীতিবিদদের কাছে। নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে উপায় বাতলেছেন তারা। প্রায় সবাই-ই আশার আলো দেখছেন আলোচনার টেবিলে- কেউবা দেখছেন শুধুই অন্ধকার।
দেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যলয়ের ভিসি ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া বল ঠেলে দিলেন রাজনীতিবিদদের কোর্টেই। তিনি মানবজমিনকে বলেন,  চলমান সংকটের সমাধান কিভাবে হবে তা রাজনীতিবিদরাই ভাল বলতে পারবেন। গণতন্ত্রের উত্তরণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সংলাপ হয়- হতে পারে। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন বা তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু এসব বিষয়ে কমেন্ট করব না। শিক্ষার একজন র্স্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে এমন অবস্থান আমার নেই। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বর্তমান সরকার যে ক্ষমতায় এসেছে সেটাও একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। তাই যা হবে তা একটি প্রক্রিয়া মেনেই হওয়া উচিত।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল আজিজ দেশের বর্তমান অবস্থায় যেন অনেকটাই দিশাহারা। মানবজমিনকে বলেন, এখন উপায় কি বুঝে উঠতে পারছি না। ‘উই আর পাজল্‌ড’। তিনি বলেন, সংলাপ হওয়ার মতো কোন পরিবেশ দেখছি না। একটি সুযোগ হয়েছিল-নষ্ট হয়ে গেছে। সংলাপ ছাড়া উত্তরণের পথ নাই বলেও মত দেন এ শিক্ষাবিদ। তিনি এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে বলেন, প্রেসিডেন্ট চাইলে উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে তা কতটুকু সফল হবে জানি না। তিনি বলেন, আমাদের পলিটিক্স খুবই ‘বিলো স্ট্যান্ডার্ড’। আস্থার বড় সঙ্কট।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীও প্রেসিডেন্টেই শেষ ভরসা খুঁজছেন। সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, দু’দলের মধ্যে সংলাপ হওয়ার পরিবেশ নেই। এখন প্রেসিডেন্টই একমাত্র উপায়। তিনি যদি সব রাজনৈতিক দল ও পেশার মানুষকে নিয়ে বৈঠক ডাকেন তবেই সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে আমার মনে হয়। প্রেসিডেন্ট দলের লোক হলেও শপথের পর তিনি এখন দেশের অভিভাবক।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক পুরকায়স্থ মানছেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতেই হবে। তিনি বলেন, আলোচনার টেবিলে অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান এসেছে- এক্ষেত্রেও তাই হবে জাতির এমনটি প্রত্যাশা।
সংলাপ খুবই জরুরি বলে মত প্রকাশ করলেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ। জ্বালাও-পোড়াও পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকট উত্তরণ সম্ভব। ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, দেরি না করে দেশের অর্থনীতির চাকা অচল হওয়ার আগেই সঙ্কটের সমাধান প্রয়োজন। সংলাপের মাধ্যমে সমাধান আসবে ব্যবসায়ী সমাজ এমনটা প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সিলেট শাখার সভাপতি ডা. রুকন উদ্দিন আহমদ বলেন, বড় বড় যুদ্ধও শেষ হয় আলোচনায়। আলোচনা-সংলাপই একমাত্র উপায়। রাজনীতিবিদরা আরও ভাল বুঝবেন কি উপায়ে সঙ্কট থেকে উত্তরণ হতে পারে। তিনি বলেন, সংসদীয় রাজনীতিতে প্রেসিডেন্টের ‘রোল’ বেশি নেই। সংলাপই সমাধান।
গণতন্ত্রী পার্টির সিলেট জেলা সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার আরশ আলী আশার কোন আলো দেখছেন না। মানবজমিনকে বলেন, সঙ্কটের  সমাধান আমি জানি না সম্ভবত আপনিও জানেন না। দেশের মানুষ জিম্মি। তিনি বলেন, সংলাপের পরিবেশ নেই। আবার সমাধান হতে হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে। দু’পক্ষই অনড় অবস্থানে। কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। তবে এখন দেশের যে অবস্থা তা কারও কাম্য হতে পারে না।
সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, সবার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি- আলোচনা তা শীর্ষ বা নিচ পর্যায় থেকে। তিনি বলেন, সংলাপের পরিবেশ নেই। তবে সুশীল সমাজ উদ্যোগ নিতে পারে। দেশ এভাবে চলতে পারে না। আলোচনায় বসা ছাড়া কোন উপায় নেই। সঙ্কট শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সাধারণ মানুষ এতে যুক্ত হয়েছেন। অতএব সংলাপের কোন বিকল্প নেই।
সিলেট প্রেস ক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, উত্তরণের উপায় আছে। দু’নেত্রী যদি প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে পারেন তবেই। তাদের উপরই সবকিছু নির্ভর। তিনি বলেন, আইন-সংবিধান কিছুই বাধা হবে না। বৈঠক-সংলাপ সবই হতে পারে। যদি দু’নেত্রী আন্তরিক হন। গরিবের বড়-ই দুর্দিন। রাস্তাঘাটে পেট্রলবোমায় মানুষ মরছে। অথচ দু’নেত্রী নিরাপদ আছেন। তাদেরকে দেশের জনগণের কথা ভাবতে হবে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান মানবজমিনকে বললেন, সংলাপ অবশ্যই জরুরি। তবে জনগণ যাতে উপকৃত হয়। তিনি বলেন, সংলাপে বসে নাটক করে লাভ নেই। সংলাপে উত্তাপ কমবে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, হানাহানি তো কেউ চায় না। হানাহানি কার জন্য? ব্যক্তির ইচ্ছা না জাতির ইচ্ছা? ডেমোক্রেটিক কান্ট্রিতে ডেমোনস্ট্রেশন হয়, কিন্তু হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও হতে পারে  না।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, বর্তমানে দেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা কারো কাম্য হতে পারেনা। এটা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করে বিএনপি আবারও প্রমাণ করেছে তারা হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। তাই এদের সঙ্গে সংলাপ করে কি লাভ হবে তা বোঝার আছে। সাবেক মেয়র আরও বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা, আইবি রহমান হত্যা, হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা সর্বোপরি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে কোন আলোচনা বা সংলাপের প্রশ্ন উঠে না।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম মানবজমিনকে বলেন, দেশের এ সঙ্কট রাজনৈতিক-এর সমাধানও হতে হবে রাজনৈতিকভাবে। তাই প্রয়োজন আলোচনার-প্রয়োজন সংলাপের। তিনি বলেন, দু’জনে মারামারি হলে তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হয়। এখানেও তাই। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংলাপই এ সঙ্কট খেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়।

No comments

Powered by Blogger.