প্রেসিডেন্ট ভবনে তারার মেলা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঐতিহাসিক ভারত সফরকে কেন্দ্র করে গতরাতে ভারতের প্রেসিডেন্ট ভবনে বসেছিল তারার মেলা। আলো ঝলমলে সন্ধ্যায় সে এক অন্য রকম চিত্র। আকাশের তারা নয়, এ তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতি, সিনেমা, খেলাধুলা, শিল্প সব ক্ষেত্রের প্রথিতযশা ব্যক্তিরা যোগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে। এর মধ্যে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, এ আর রেহমান, গুলজার, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, শচিন টেন্ডুলকর। হেভিওয়েট রাজনীতিক, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও দলীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীর সেখানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত হয়েছেন কিনা তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় নি। নৈশভোজে আড়াই শ’ অতিথির উপস্থিত থাকার কথা। এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় শুধু অতিথিকে, তার স্ত্রী বা সন্তানদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। রাখা হয় আমিশ ও নিরামিশ দুই জাতীয় খাবার। সেখানে পরিবেশন করার কথা উত্তর ও দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। এতে ছিল গালাউতি কাবাব, গুজরাটি কাড়ি। সঙ্গে ছিল সন্দেশ ও পান। প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে এক ঘণ্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়। তা পরিবেশন করে সুপরিচিত নৃত্যগোষ্ঠী সেহের। প্রেসিডেন্ট ভবনের অডিটরিয়ামে ২৫ মিনিটের কনসার্ট হয়। সেখানে ৩০ নর্তকী তাদের নৃত্য পরিবেশন করেন। এর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাচের ৫ গুরু মাধবী মুডগাল (ওড়িশি), প্রেরনা শ্রীমালি (কত্থক), গীতা চন্দ্রণ (ভারতনাট্টম), রাজেন্দ্র পিলালি (কথাকলি) ও চারু সিজা মাথুর (মনিপুর)। সেহের গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জীব ভারগাভ বলেন, আমাদের তৃণমূলের সংস্কৃতি দেখাতে পেরে আমরা আনন্দিত। ভারতীয় সংগীতের বেশির ভাগই ফিউশন হিসেবে বাইরের বিশ্বে তুলে ধরা হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভবনে এজন্য রিহার্সেল করা হয় কমপক্ষে ২৫ দিন।
খাবার তালিকায় শোর্বা, আনান, গুলাব জামুন
নৈশভোজের খাবার তালিকায় ছিল গালাউতি কাবাব, সুফিয়ান ফিশ টিক্কা, চিকেন মালাই টিক্কা, স্টির ফ্রাইড ব্রোকোলি, পনির মালাই টিক্কা, ভেজিটেবল কাবাব, মাস্টার্ড ফিশ কারি, মাটন রোগান জোশ, চিকেন কোর্মা, ডাল রাইসিনা, হাক্কা ভেজ, কাড়ি পাকোড়া, ছোলা, পাপড়, পোলাও, তান্দুরি রুটি ও নান। খাবারের শেষে মিষ্টান্নের তালিকায় রাখা হয় মালপোয়া ও রাবড়ি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আতিথেয়তায় প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্য দুপুরের খাবারের তালিকায় ছিল- শতবর্ষের শোর্বা, আনান আর পনিরের সুলা, নাদরুর গুলার, পনির লাবাবদার, মিক্সড ভেজিটেবল কালোঞ্জি, গুজরাটি কাড়ি, মটর পোলাও ও ভারতীয় রুটি। তাজা ফলের সমাহারের পাশাপাশি আর মিষ্টান্নের তালিকায় ছিল গাজরের হালুয়া ও গুলাব জামুন। এছাড়া ছিল দক্ষিণ ভারতীয় কফি আর হারবাল চা।
পূজা ঠাকুরের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার
নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন। সেখানে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। এখানেই উইং কমান্ডার পূজা ঠাকুরের নেতৃত্বে ওবামাকে দেয়া হয় আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার। প্রথম নারী কর্মকর্তা হিসেবে পূজা ঠাকুরই তিন বাহিনীর নেতৃত্বে গার্ড অব অনারের নেতৃত্ব দেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে দেয়া হয় ২১ বার তোপধ্বনি। একে বলা হয় গান স্যালুট। নারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেয়ার কারণ আছে। এর কারণ হলো, এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের থিম হলো ‘নারী শক্তি’। সে ভাবধারা ফুটিয়ে তুলতে এ আয়োজন করা হয়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে গার্ড অব অনার দেয়া পূজা ঠাকুর বলেন, আমার ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য এটা এক গর্বের মুহূর্ত। এর মাধ্যমে আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছি। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে আমরা গার্ড অব অনার দিতে পেরে গর্বিত। এ জন্য আমরা অনেক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। পূজা মনে করেন, এর মাধ্যমে তিনি আরও নারীকে বিমান বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আরও উৎসাহী করতে পেরেছেন। ওদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল টুইটারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দিচ্ছেন একজন নারী কমান্ডিং অফিসার- এটা জেনে আমি নারী হিসেবে গর্বিত। পূজা ঠাকুর বলেন, আমাদেরকে নারী হিসেবে আলাদা করা হচ্ছে না, পুরুষদের ক্ষেত্রে যেমন দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে আমাদের দিকেও একই ভাবে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.