সংলাপের দাবিতে অনশনে বসবেন বি. চৌধুরী

একজন সিনিয়র সিটিজেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে সঙ্কট নিরসনে দুই নেত্রীর প্রতি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তারা আলোচনায় না বসলে সাধারণ মানুষ ও পেশাজীবীদের নিয়ে গণ-অনশনে বসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল তার বারিধারার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করছি- চলমান সঙ্কট নিরসনে দু’-একদিনের মধ্যে আলোচনায় বসুন। ৭ দিনের মধ্যে আলোচনায় না বসলে আমরা সাধারণ মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক ও কৃষক-শ্রমিকদের নিয়ে গণ-অনশন শুরু করবো। তিনি বলেন, চলমান সঙ্কট এখন কঠিন রূপ পরিগ্রহ করেছে। জ্বালাও, পোড়াও আর মানুষ হত্যার রাজনীতি চলছে। প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি বা তারও বেশি টাকার। অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে। এ এক ভয়াবহ অবস্থা। কল-কারখানা চলছে না, কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছেন না। মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে না। বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বর্তমানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজনীতি। এত কিছুর পর দুই নেত্রী কথা বলছেন না। এ কারণে সাধারণ মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য সাধারণ মানুষের দাবি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ অবিলম্বে আলোচায় বসুক। মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করবেন না। বি. চৌধুরী বলেন, চলমান সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। এ সত্য কথাটি কেউ না বুঝলে মনে হবে তারা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করছেন না। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, আওয়ামী লীগের বাস্তব দায়িত্ব ছিল যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। আওয়ামী লীগ ৫ই জানুয়ারি সংবিধান রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছিল, এটা কিন্তু ভুল নয়। যাতে সংসদে সব দলের প্রতিনিধি আসতে পারে এ দায়িত্বও আওয়ামী লীগের ছিল। কিন্তু ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এ কারণে ওই নির্বাচন সঠিক হয় নাই। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেওয়াজ ইতিহাসে নাই। তিনি বলেন, ওই নির্বাচনের আগে সরকারি দলের অনেক মন্ত্রী বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের পর তারাই আবার বলতে শুরু করলেন, ৫ বছরের আগে কোন নির্বাচন হবে না। শতকরা ১০ ভাগ ভোটে নির্বাচিত সংসদকে চ্যালেঞ্জ করার মতো, এটা সঠিক হয় নাই। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট উল্লেখ করে বি. চৌধুরী বলেন, তারা সরকারেও আছে, আবার বিরোধী দলেও, সুতরাং এটা কোন বিরোধী দল নয়। বি. চৌধুরী বলেন, লন্ডনে বসে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সব কথা বলেছেন, এটা ঠিক হয় নাই। পাশাপাশি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও ছোট করা হচ্ছে। এসব রাজনীতির শ্রদ্ধার ভাষা নয়। প্রয়াত নেতাদের বিরুদ্ধে অতিকথনের কারণে দ্বন্দ্ব-বিভেদ বেড়ে যায়। এ অবস্থা দেশকে বিভক্ত করে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বলবো, আগামী এক বছর বঙ্গবন্ধু ও জিয়া সম্পর্কে খারাপ কথা বলবেন না। বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকে ছোট করে এমন অসত্য ধারণা দেবেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্ন্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সহিংস আন্দোলন, হরতাল সমর্থন করি না। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আবদুর রউফ মান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাহবুব আলী, মো. শাহ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.