রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত করেছে সরকার

নিরাপত্তাবাহিনীর যেসব কর্মচারীর রাজনৈতিক খায়েশ রয়েছে তাদের উর্দি খুলে ও প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতিতে নামার আহ্বান জানিয়েছে ২০দল। গতকাল বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা  রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ, সহিংসতা বন্ধ ও বিরোধী দলের অধিকার রক্ষার আহ্বান   জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের দেয়া বিবৃতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। তবে এ আহ্বানের প্রেক্ষিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাদের সংশয়ের কথাও  উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ, সহিংসতা বন্ধ এবং বিরোধী দল ও জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। সমস্যাটি যে রাজনৈতিক এবং বিরোধী দলের কর্মসূচি পালনে ক্ষমতাসীনদের বাধা প্রদান ও নির্যাতন থেকে উদ্ভূত তারা তা অনুধাবন করেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সহিংস ঘটনাবলীর নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের যে আহ্বান ক্ষমতাসীনদের প্রতি জানানো হয়েছে, সে ব্যাপারে আমাদের এবং বাংলাদেশের জনগণের সংশয় রয়েছে। কারণ, ভোটার-বর্জিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনী প্রহসনে ক্ষমতা জবরদখলকারীরা প্রশাসন, আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ ও তদন্ত প্রক্রিয়াসহ সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে চরম দলীয়করণের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। এদের মাধ্যমে কোন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্ত সম্ভব নয়। কাজেই রিয়াজ রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ওপর গুলি ও বোমা হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রহরাধীনে চলাচলরত যানবাহনে রহস্যজনক হামলায় মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো নৃশংস ঘটনাবলীর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এদের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এমন পৈশাচিক কার্যকলাপ অতীতে আন্দোলনের নামে  তারাই করেছে, বর্তমানে যারা ক্ষমতাসীন। সাম্প্রতিকালে তাদের দলভুক্ত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে ঘটনাস্থলে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হলেও তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর মিথ্যা মামলায় বাড়ি-ঘরে হানা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, গুম ও হত্যা করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ধ্বংস এবং পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিবৃতিতে সেলিমা রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষপদে এমন সব চরম দলবাজ লোকদের বসানো হয়েছে, তারা এখন আইনকানুন এবং তাদের আওতা, পরিধি ও কর্তব্যের সীমারেখা মেনে চলারও ধার ধারছে না। গত শুক্রবার রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে পুলিশের আইজি ও র‌্যাবের ডিজি জনসভায় রাজনীতিবিদদের ভাষণ দেয়ার মতো করে রীতিমত রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বিরোধী দল ও জনগণকে কঠোর ভাষায় হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেশে জাতীয় নির্বাচন কখন হবে, না হবে সে ব্যাপারেও তারা মন্তব্য করেছেন। আন্দোলনকারীদের জীবননাশের হুমকি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার কথা বলেছেন। বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কটূক্তি করে তারা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক এজেন্ডার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এর আগে বিজিবি’র ডিজি সংবাদ সম্মেলন করে একইভাবে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এসব ঘটনা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে অকল্পনীয়। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে বেতন-ভাতাভোগী প্রজাতন্ত্রের এসব কর্মচারীর এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল কোন সরকার থাকলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও এখতিয়ারবহির্ভূত এমন সব বেআইনি বক্তব্য দেয়ার দায়ে তাদেরকে অবশ্যই চাকরিচ্যুত করে আইনামলে আনা হতো। সেলিমা রহমান বলেন, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি-  ক্ষমতাসীনরা এতটাই দেউলিয়া হয়ে পড়েছে যে, এখন রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পথে না গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব কর্মচারীর রাজনৈতিক খায়েশ রয়েছে আমরা তাদেরকে উর্দি খুলে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির মাঠে নামার আহ্বান জানাচ্ছি। নিরাপত্তা বাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি আমাদের আহ্বান, সুবিধাভোগী ও উচ্চাভিলাসের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এই সমস্ত দলবাজ কর্মকর্তাদের বেআইনি আদেশ-নির্দেশ মানতে আপনারা বাধ্য নন। আপনারা প্রকৃত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জনগণের পাশে থাকবেন। আইনসম্মত পন্থায় কর্তব্য পালন করবেন। বিবৃতিতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে ১১ হত্যাসহ গুম-খুনের বিভিন্ন ঘটনা বিতর্কিত র‌্যাব বিলুপ্ত করার দাবি দেশে-বিদেশে উঠেছে। এই কালিমা দূর করে র‌্যাবের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার বদলে নতুন ডিজি আরও বিতর্কিত ও গণবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই বিতর্কিত কর্মকর্তাদের কারও কারও নিকটাত্মীয়রা পর্যন্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই এ ধরনের দলবাজ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সন্ত্রাস ও নাশকতা রোধে কোন নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা আশা করা যায় না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। তারা অতীতে সব সময়েই জনগণের পাশে থেকে পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আইনসম্মতভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার এবং সুবিধাভোগী ও দলবাজ কতিপয় কর্মকর্তার কারণে তা যেন ভূলুণ্ঠিত না হয়, আমরা সে আহ্বান জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.