পদ্মায় বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার- নেপথ্যে আ.লীগের স্থানীয় দুই নেতা

(ফরিদপুর সদরের কামারডাঙ্গি এলাকায় পদ্মা নদীতে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় জেলেরা। গত শুক্রবার তোলা ছবি l প্রথম আলো) ফরিদপুর-মানিকগঞ্জ সীমানায় পদ্মা নদীতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতার সহায়তায় আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় জেলেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের শেষ অংশে কামারডাঙ্গি এলাকায় পদ্মায় আড়াআড়ি করে প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটারজুড়ে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বেড়ার পশ্চিম প্রান্ত ফরিদপুরের কামারডাঙ্গিতে এবং পূর্ব প্রান্ত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পূর্ব সিলিমপুরে গিয়ে ঠেকেছে। বেড়ার পানির নিচের অংশে কারেন্ট জাল দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর বেড়ার নির্মাণ শুরু হয়। শেষ হয়েছে ৪ জানুয়ারি। এর পর থেকে চলছে মাছ শিকার।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামারডাঙ্গি এলাকায় পদ্মা নদীতে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। তবে এ কাজে কারা জড়িত, তা আমার জানা নেই।’
পাবনার সুজানগর উপজেলার বাবুলপুর গ্রামের জেলে সজল হালদার ও তাঁর সহযোগীরা বাঁশের বেড়া নির্মাণ করেছেন বলে জানা গেছে। সজল হালদার বলেন, তিনিসহ পাবনা অঞ্চলের ৩০ জন জেলে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন। সজল হালদার আরও বলেন, তাঁদের এ কাজে সহায়তা করছেন ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমন্বয়কারী মোফাজ্জেল হোসেন ও সদস্য হারুন ব্যাপারী।
বেড়া নির্মাণে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে হারুন ব্যাপারী বলেন, ওই বেড়া ফরিদপুরের সীমানার মধ্যে পড়েনি। এটি রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ জেলায় পড়েছে। তবে মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘বেড়ার কিছু অংশ ফরিদপুরের মধ্যে পড়লেও দলীয় নেতাদের বলেছি বিষয়টি ম্যানেজ করে নিতে।’
ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হিরু মিয়া বলেন, ওই বেড়ার কারণে ফরিদপুরের জেলেরা নদীতে মাছ পাচ্ছেন না। এতে বাজারে ইলিশসহ সব মাছের দাম বেড়ে গেছে।
ফরিদপুর সদরের মমিনখাঁর হাটে মাছ বিক্রি করেন কবিরপুর এলাকার জেলে বাচ্চু শেখ। তিনি বলেন, ‘১২ দিন ধরে বেড়ার পাশে গিয়ে মাছ ধরতে পারছি না। আড়াআড়ি ফাঁদ দেওয়ায় বেড়ার ওপারেও যেতে পারি না। তাই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।’
বুধবার কবিরপুর মৎস্যজীবীদের পক্ষে হযরত শেখ ওই বাঁশের বেড়া অপসারণের দাবি জানিয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এর অনুলিপি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহিরুল ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াহিয়া খানকে দেওয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মাছের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে নদীতে আড়াআড়ি ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরা যাবে না।
ইউএনও মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রযোজনীয় উদ্যোগ নেব।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘জেলেদের লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে বেড়া অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.