সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের উদ্যোগ নেবে ভারত

রাজ্যসভার আসন্ন অধিবেশনে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনে ফের উদ্যোগ নেবে ভারত। গতকাল শনিবার নয়াদিলি্লতে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আশ্বাস দেন। তোফায়েল আহমেদ স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে বিরাজমান অসুবিধা দূর করার আহ্বান জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি কানেক্টিভিটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। গতকাল সকালে দিলি্লতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন,
'বাণিজ্য ও বিনিয়োগই হলো প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি।' অবিলম্বে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে উদ্যোগী হতে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই দু'দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ডেকে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ বৈঠকের পরেই তোফায়েল আহমেদ ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে 'ফলপ্রসূ' বৈঠক করেন বলে দিলি্লর হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ইনামুল হক চৌধুরী জানান।
তোফায়েল আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে বৈঠকে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২৫টি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য ভারতে শুল্কমুক্ত রফতানির জন্য ভারত সরকার অনুমতি দিলেও তার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশ। তার প্রধান কারণ অশুল্কজনিত বাধা। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি পণ্যের গুণমান ও পরীক্ষা-সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা। এ বাধার কারণে তৈরি পোশাক ভারতের বাজারে পাঠানো যাচ্ছে না। তোফায়েল বলেন, বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং সংস্থার (বিএসটিআই) মান ভারত স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তবে বিএসটিআইকে আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে ভারত দ্রুত কারিগরি সাহায্য দেবে। তোফায়েল আহমেদ ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যে তৈরি পোশাক সরবরাহে শিলিগুড়ি ও গৌহাটিতে বাণিজ্যিক অফিস খোলার জন্য ভারতের মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেন। বর্তমানে সীমান্তে দুটি সীমান্ত হাট চালু রয়েছে। ত্রিপুরা ও মিজোরাম-রাঙামাটিতে আরও দুটি সীমান্ত হাট খোলারও প্রস্তাব দেন তিনি। ভারতের মন্ত্রী বলেছেন, 'বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। তাদের সহযোগিতা করতে দ্রুত প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে।' আগরতলা, পেট্রাপোল, ডাওকি ও শ্রীমন্তপুরের অবকাঠামো দ্রুত উন্নত করা হবে বলে ভারতের মন্ত্রী আশ্বাস দেন। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক এ করিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭৪ সালে তদানীন্তন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রাজ্যসভার গত অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করা হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
শেখ হাসিনার অধীনেই অন্তর্বর্তী নির্বাচন বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এখনই নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে সংলাপের মাধ্যমে বিরোধীদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হলে তবেই নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু সে নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে নির্বাচনেও জামায়াত অংশ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, কিছু কিছু পশ্চিমা দেশ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তারা সহিংসতার নিন্দা করছে। এখন আমেরিকাও বুঝেছে, জামায়েত সহিংস সংগঠন। তিনি বলেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে আলোচনায় জঙ্গিবাদ গুরুত্ব পেয়েছে। এতে ভারত যে উদ্বিগ্ন, তা আলোচনায় বোঝা গেছে। তোফায়েল আহমেদ ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত দু'দিনব্যাপী সার্ক বিজনেস লিডার্স কনক্লেভে অংশগ্রহণ করার জন্য নয়াদিলি্ল আসেন। কনক্লেভে যোগদান ছাড়াও তিনি শুক্রবার ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ভারতের প্রথিতযশা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
(মনমোহন-তোফায়েল বৈঠক)

No comments

Powered by Blogger.