কারখানা ফেরত চায় রেশম বোর্ড by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

বিক্রির জন্য সাত বছর আগে রাজশাহী রেশম কারখানা প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বিক্রি হয়নি। এখন পুনর্গঠিত রেশম বোর্ড কারখানাটি চালু করার জন্য ফেরত চেয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। তবে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এর আগে ফেরত দিতে চায়নি। তার পরও রেশম বোর্ড আবারও ফেরত চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর কারখানাটি স্থাপিত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১০ কোটি টাকার নতুন যন্ত্রপাতি কিনে দিয়ে কারখানাটিকে আধুনিকায়ন করে। লোকসান থাকলেও কোম্পানিটি তখন ভালোই চলছিল, কিন্তু বিএনপি সরকার ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মূলধন না থাকার অজুহাতে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। ৪১ বছর পর কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় এই কারখানায় কর্মরত প্রায় ৩০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। পাশাপাশি রেশমকে ঘিরে আরও প্রায় ৫০ হাজার পলু চাষিরা বিপাকে পড়েন। সে সময় আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। ফলে হতাশা থেকে এ অঞ্চলের পলুচাষিরাও চাষ কমিয়ে দেন। 
২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানাটিকে বর্তমান সরকার চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কাছে চলে যাওয়ায় এখন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত মার্চ মাসে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় রাজশাহী রেশম কারখানাটিকে ফেরত চেয়ে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে চিঠি দেয়। প্রাইভেটাইজেশন কমিশন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে পাল্টা চিঠি দিয়ে বলেছে, এটা যেহেতু একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশন একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা তাই এ বিষয়ে তারাই ব্যবস্থা নেবে।
রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশার নির্বাচনী ইশতেহারে রেশম কারখানাটি খুলে দেওয়ার ঘোষণা ছিল। তিনি এবার দ্বিতীয় মেয়াদেও সাংসদ রয়েছেন। এবার তিনি রেশম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে এর আগেও চিঠি দিয়ে কারখানাটি ফেরত চাওয়া হয়েছে। আবারও ৪ সেপ্টেম্বর রেশম বোর্ডের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী তারা ফেরত দেবে। তিনি বলেন, ফেরত পেলে রেশম বোর্ডের উদ্যোগে এই কারখানা চালু করা হবে। এ বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। জাপান ও চীন এদিক দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা প্রযুক্তি এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেবে।
সাংসদ আরও বলেন, রেশমচাষিদেরও এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। চেষ্টা করা হবে নিজেদের উৎপাদিত সুতা দিয়েই কারখানা চালানোর। যত দিন না হয় তত দিন বাইরে থেকে সুতা আমদানি করা হবে। কারখানাটি চালু হলে রাজশাহী অঞ্চলের বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে রেশম গবেষণা কেন্দ্রেও একটি মডেল কারখানা ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। যাতে করে বাইরের মানুষ এসে সত্যিকারের রাজশাহী সিল্ক সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। 
এর আগে ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজশাহী রেশম কারখানাটি পরিদর্শন করে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে রেশম কারখানাটি চালু করার বিষয়ে মত দেন। কিন্তু প্রাইভেটাইজেশন কমিশন কারখানাটি ফিরিয়ে না দিয়ে বেসরকারি খাতে ইজারা দিয়ে চালানোর জন্য পাল্টা প্রস্তাব দেয়। তাতে ব্যর্থ হয়ে নিলামে বিক্রির জন্য চারবার বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতেও সাড়া মেলেনি। ২০১১ সালের জুন মাসে রাজশাহীতে এক সেমিনারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বন্ধ কারখানাটি চালুর আশ্বাস দেন। 
এর পর গত বছরের মার্চ মাসে রেশম বোর্ড, রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশনকে একত্র করে ‘বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড’ নামে পুনর্গঠন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কারখানাটি ফেরত চাইলে মন্ত্রণালয় এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মধ্যে আবারও রশি টানাটানি শুরু হয়। গত মার্চে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কারখানাটি ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন পাল্টা চিঠি দিয়ে কারখানাটি ফেরত না দেওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দেয়।

No comments

Powered by Blogger.