গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হচ্ছে by সিরাজুস সালেকিন

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঈদের পর দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ বছরের ২৩শে ফেব্রুয়ারি জ্বালানি মন্ত্রণালয় বরাবর গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয় পেট্রোবাংলা। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে গ্যাসের অপচয় রোধ ও এলপি গ্যাসের মূল্য কমানোর বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দেন। গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণে গণশুনানি হবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর মাধ্যমে। নতুন মূল্য তালিকা কার্যকর হলে আবাসিক লাইনের গ্রাহকদের দ্বিগুণেরও বেশি মূল্য  
পরিশোধ করতে হবে। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানায়, আবাসিক খাতে এক চুলার গ্যাসের দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা এবং দুই চুলা ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক চুলায় ১১২ দশমিক ৫০ এবং দুই চুলায় ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আবাসিকে মিটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার ঘনফুট ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জন্য ৭৯ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা (৫.২৪ শতাংশ), বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২৬৮ টাকা ০৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা (৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ), শিল্পকারখানার গ্রাহকদের ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা (৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ), চা বাগানে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা (২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ), ক্যাপটিভে ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা (১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ) এবং সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা (৯ দশমিক ৭১ শতাংশ) করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিএনজিতে প্রতি হাজার ঘনফুটে ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১২ সালের ২০শে মে পেট্রোবাংলা বিইআরসির কাছে আবাসিক গ্রাহকদের ছাড়া অন্য খাতগুলোতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। এর আগে ২০০৯ সালের ৩০শে আগস্ট গ্যাসের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বিইআরসি। পরের দিন ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ওই মূল্যতালিকা কার্যকর হয়। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনুসর মানবজমিনকে বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৫ বছর আগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। গত কয়েক বছরে মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। অন্যদিকে গ্যাস উত্তোলনের খরচ বেড়েছে। যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে। এ সব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকার গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়। দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে গ্যাসের অপচয়ের চিত্র তুলে ধরে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেন, যেসব এলাকায় পাইপলাইন নেই সেখানে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করলে একটি পরিবারকে তিন থেকে চার হাজার টাকা মাসে খরচ করতে হয়। অথচ পাইপলাইনে যারা গ্যাস ব্যবহার করছেন তারা মাত্র ৪৫০ টাকায় যত ইচ্ছা গ্যাস ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে গাড়ির মালিকরা সস্তা দামে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করছেন। ১৬ কোটি মানুষের সম্পদ গুটিকয়েক মানুষের বিলাসের পণ্যে পরিণত হয়েছে। এই বৈষম্য দূর করতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে অপচয় কমানো দরকার। এছাড়া এলপি গ্যাসে সরকারকে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হয়। পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলপি গ্যাসের দাম সমন্বয় করলে তা সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসা সম্ভব। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানান, কি পরিমাণ গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যাচাই-বাছাইয়ের পর নতুন করে দাম নির্ধারণ করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে পেট্রোবাংলা। নতুন করে পর্যালোচনা করে গ্যাসের প্রস্তাবিত বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম কি পরিমাণ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী দাম বাড়ানোর সঙ্গে গ্যাসকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.