কোরবানির গরুর হাটে খুঁটির ভাড়া ১০,০০০

আজ বাদে কাল ঈদ। জমে উঠেছে গাবতলীর কোরবানির পশুর হাট। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। ভিড়ও বাড়ছে ক্রেতাদের। ক্রেতাদের অভিযোগ, গরুর দাম আগের বছরের অনুপাতে খুব বেশি। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, হাটের বাড়তি খরচ মেটাতে তারা বেশি দাম চাইতে বাধ্য হচ্ছেন। বেচাকেনা কম থাকলেও হাটে সক্রিয় দালালরা। গতকাল গাবতলীর হাট ঘুরে দেখা যায় গরুর দীর্ঘ লাইন। হাসিল বাবদ হাট কর্তৃপক্ষ গরুর দামের ৫ শতাংশ আদায় করছেন। এর বাইরেও বিক্রেতাকে জায়গা ভাড়া বাবদ বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। সামনের দিকের ভাড়া ১০ হাজার টাকা। মাঝখানে আট হাজার টাকা। আর পেছনের দিকের ভাড়া তিন থেকে ছয় হাজার টাকা। হাটের বাইরে গড়ে উঠেছে আরেক হাট। স্থায়ী হাটের পূর্ব পাশে বেড়িবাঁধের পাশ দিয়ে দ্বীপনগর পর্যন্ত লাল-হলুদ রঙের শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। এসব সামিয়ানার ভেতরের জায়গাভেদে খুঁটি ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এখানে একটি গরু রাখতে ১ হাজার  থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে গরুর মালিককে। স্থানীয়রা জানান, বালুর ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর হাটের কয়েকদিন ব্যবসা বন্ধ করে শামিয়ানা টাঙিয়ে অস্থায়ী ঘর করে জায়গা ভাড়া দিয়েছেন। বাইরের জায়গার ভাড়া বেশি। ভেতরের জায়গার ভাড়া কম। প্রকাশ্যে বেড়িবাঁধে এভাবে শ’ শ’ শামিয়ানা টাঙিয়ে অবৈধভাবে হাট বর্ধিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে হাটে অবস্থানরত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। ক্রেতার পরিমাণ কম থাকলেও দালালের অভাব নেই। ক্রেতারা হাটের গেটের কাছাকাছি পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়ে যায়। দালালের শরণাপন্ন না হতে ইজারাদারের পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। তারপরও দালালদের দাপটের কাছে অসহায় ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাংলামোটর থেকে গরু কিনতে গিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা হাটে ঘুরেছেন। বলেন, ঢাকার সবচেয়ে বড় হাট শুনেই এখানে এসেছি। কিন্তু দাম অত্যধিক হওয়ায় গরু পছন্দ হচ্ছে না। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় গরুর বিক্রি কম। ৫০ হাজার টাকার নিচে যে সব গরুর দাম সেগুলো সহজেই বিক্রি হচ্ছে। পাবনা থেকে ৩টি গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে এসেছেন সেলিম মিয়া। পথে নানারকম ভোগান্তি মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তার সঙ্গে আরও ৪ জন লোক এসেছেন। তাদের দৈনিক ৫০০ টাকা দিতে হবে। হাটে গরু রাখার জন্য প্রতি গরু বাবদ ইজারাদারকে দিতে হবে ৮ হাজার টাকা। গরুর খাবার কিনতে প্রতিদিনের খরচ এক হাজার টাকা। ক্রেতার অপেক্ষায় ২ দিন থেকে অপেক্ষা করছেন তিনি। কিন্তু ক্রেতারা শুধু দেখেই চলে যাচ্ছেন। আজ পর্যন্ত কেউ দাম করেননি। গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। কুমারখালী থেকে জাকাত উদ্দিন এসেছেন তার আদরের ‘পাগলু’-কে নিয়ে। পাগলু ফ্রিজিয়ান জাতের। সাড়ে চার বছর থেকে পাগলুকে লালন-পালন করেছেন জাকাত উদ্দিন। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর এসেছেন গাবতলীর হাটে। এক সপ্তাহ আগেই হাটের জায়গা বুকিং দিতে হয়েছে। কিন্তু গতকাল বিকাল পর্যন্ত একজন ক্রেতাও দাম করেননি। জাকাত উদ্দিন আশা করেছিলেন, ৯ লাখ টাকায় পাগলুকে বিক্রি করবেন। বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে তাই ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু এখন গরু বিক্রি করতে না পারলে অনেক টাকা লোকসান দিতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সামনের বছর থেকে ঢাকায় আর কেউ গরু বিক্রি করতে আসবেন না। হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর গাবতলী পশুর হাটে ক্রেতা খুবই কম। শুক্রবার তারা আশা করেছিলেন প্রচুর ক্রেতা আসবেন। কিন্তু বিকাল পর্যন্ত আশানুরূপ ক্রেতা পাওয়া যায়নি। গাবতলী হাট পরিচালক রাকিব ইমরান বলেন, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত গাবতলীর হাটে প্রায় ২০-২৫ হাজার গরু উঠেছে। ক্রেতা না থাকায় গরুর মালিকরা চিন্তিত। লোকসানের আশঙ্কায় কম দামেই গরু বিক্রি করে ফেলছেন অনেকেই। ফলে হাসিলের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। হাটের ভেতরে খুঁটি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাটের বাইরের লোকজন খুঁটি ভাড়া আদায় করছে। এগুলো তাদের নিজস্ব জায়গা।

No comments

Powered by Blogger.