পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামীকাল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এ উপমহাদেশে উদযাপিত হবে বৃহৎ এই উৎসব। মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ঈদকে ঘিরে আনন্দ-উদ্দীপনার আমেজ সারা দেশে। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণে সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পালন করছে ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। এভাবে আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালবাসা, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন তা অতুলনীয়। তার আদর্শ অনুসরণে ১০ই জিলহজ ঈদুল আজহা পালিত হয়। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আলাদা বাণীতে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও সরকার ও বিরোধী দলের সিনিয়র রাজনীতিক, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিকে ঈদের পর ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য আন্দোলনকে সামনে রেখে সর্বত্র বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ উত্তেজনা। এক্ষেত্রে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসির দাবিতে ইসলাম প্রিয় তৌহিদি জনতার আন্দোলন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটছে। খুন-হত্যা বেড়েছে। আত্মগোপনে থাকা অনেক সন্ত্রাসী মাঠে ফিরতে শুরু করেছে। চলছে শক্তি সঞ্চয় ও শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি।  বেড়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ। এমন অবস্থায় এবারের ঈদে বাড়তি আতঙ্ক আর উদ্বেগ কাজ করছে সবার মাঝে। আতঙ্ক আর উদ্বেগ থাকলেও নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চে করে গতকালও অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। যারা গতকাল যেতে পারেননি আজ তারা যার যার গন্তব্যে যাবেন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও এলাকায় ছুটে গেছেন ঈদ উদযাপন করতে। রাজনৈতিক দলের নেতারা এলাকায় কোরবানি দেবেন। ঈদ করবেন নিজ নিজ এলাকার লোকজনের সঙ্গে।

মোঃ আবদুল হামিদ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান। তিনি বলেন, ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি অপরিসীম আনুগত্য ও ভালবাসার এক অনুপম নিদর্শন। পরমতসহিষ্ণুতা, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মাধ্যমে শান্তি সমপ্রীতিময় বিশ্বসমাজ গঠন করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন জাতিতে জাতিতে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতাসহ অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা। ঈদুল আজহার মর্মবাণী আমাদের সেই শিক্ষা দেয়। ত্যাগের মহান আদর্শ ও শিক্ষাকে আমাদের চিন্তা ও কর্মে প্রতিফলিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বিভেদ বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।
ওদিকে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধ পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় নিজেকে আত্মনিবেদিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য চলছে। মানুষের জান, সহায়-সম্পদের কোন নিরাপত্তা নেই। দেশের বর্তমান অবস্থায় সকলের পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা সম্ভব হবে না। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পানি, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের তীব্র সংকট জনজীবনে দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আবারও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হ্‌চ্েছ। গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধির তোড়জোড় চলছে। যে কোন মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ওপর দাম বৃদ্ধির বোঝা চাপানো হবে। ঈদের আনন্দের দিনে কেউ যাতে অভুক্ত  না থাকে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার আহবান জানান তিনি। এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন খালেদা জিয়া।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই অবস্থায় গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
 ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৮ লাখ টাকা অর্থায়নে এ ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করা হয়। তবে মুসল্লিদের অজুর ব্যবস্থা করছে ঢাকা ওয়াসা। জাতীয় ঈদ ময়দান ও এর আশপাশের এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা মেট্‌্েরাপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এখানে হবে ঊদের প্রধান জামাত।
ওদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরো সুসংহত করবে বলে আমার বিশ্বাস।  জামায়াতে ইসলামী ,কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ঈদ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।

No comments

Powered by Blogger.