খুলনায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৩ বনদস্যু নিহত

খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আজ রোববার   ভোরে ও দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ দাবি করেছে, নিহতরা সবাই সুন্দরবনের ‘বনদস্যু’। এ ঘটনায় পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন বলে দাবি করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়ানের মাগুরা গ্রামের মৃত শরিফ মোড়লের ছেলে সবুর শেখ (৪০), দাকোপ উপজেলার কালাবগির বাসিন্দা মৃত সুলতান গাজীর ছেলে হানিফ গাজী (৩০), বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার নান্নু মোল্লার ছেলে আলম মোল্লা (২০), ডুমুরিয়া থানার টিপনা গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে আমিরুল শেখ (২৬), আবদুল আজিজের ছেলে আফজাল শেখ (২০), ছাত্তার মোল্লার ছেলে মফিজুল শেখ (৪১), জলিল শেখের ছেলে মাফরুল শেখ (২৪), শরাফপুর গ্রামের ছাত্তার মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা (৩৮) ও মফিজুল মোল্লা (৩৪), গোলনা গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে রুবেল শেখ (২৩), ইউসুফ আলীর ছেলে জয়দেব খান (৩৫), তেলিখালি গ্রামের তাহেম সরদারের পুত্র হাবিবুর (৪০) ও কারিমুল (৪২)। কারিমুলের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে।

খুলনার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, আজ ভোরে উপজেলার দেলুটি ইউনিয়ানের জিরবুনিয়া গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কারিমুল (৪০) ও হবি (৪২) নামের দু জন বনদস্যু নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে সুন্দরবনে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান নামে পুলিশ। পুলিশ তাঁদের নিয়ে পাইকগাছার গড়ইখালি গাংরক্ষী এলাকায় পৌঁছালে কাশেম বাহিনীর সদস্যরা ওই ১১ জনকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। দু পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টা খানেক গুলিবিনিময় হওয়ার একপর্যায়ে কাশেম বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১১ জন বনদস্যুর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশের ছয় সদস্য আহত হন বলে দাবি করেন পুলিশ সুপার। এ সময় প্রায় দু শটি গুলি বিনিময় হয় বলে তিনি জানান।

দেলুটি ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা গেছে, রাত (শনিবার দিবাগত রাত) সাড়ে তিনটার দিকে ওই একদল লোক জিরবুনিয়া গ্রামের কলেজ শিক্ষক প্রশান্ত কুমার ঢালীকে অপহরণ করে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে শিবসা নদীর শাখা নদী হাঙ্গরখানার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে তাদের ধাওয়া করে। অপহরণকারীদের নৌকা বিকল হয়ে গেলে অপহরণকারীরা চরে নেমে পড়ে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশ যোগ দেয়। পুলিশ ও অপহরণকারীদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। ঘটনাস্থলে দু জন নিহত হয়। এ ছাড়া পুলিশ ও গ্রমাবাসী ১১ জনকে ধরে ফেলে। পুলিশ ছয়টি বন্দুক ও ২৯টি গুলিও উদ্ধার করে।

পাইকগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কবির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের কাশেম বাহিনীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে লোকজন অপহরণ করে টাকা দাবি করে আসছিল। কিছু দিন আগে গড়ইখালি গ্রাম থেকে একজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পরে মুক্তিপন দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি ছাড়া পান। দেলুটি ইউনিয়নের কলেজ শিক্ষক প্রশান্ত কুমার ঢালীকে অপহরণের পরপরই এলাকাবাসী উপজেলা কর্মকর্তাকে তা জানায়। খবর পাওয়ার পরপর পাইকগাছা থানা পুলিশ ও স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়। তারা পুলিশকে তথ্য দেয় কাশেম বাহিনীর আরও অস্ত্র রয়েছে। তখন পুলিশ সেগুলো উদ্ধারের জন্য সুন্দরবনের দিকে যায়।

ঘটনা সম্পর্কে দেলুটি ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান সমরেশ হালদার বলেন, ‘বার আড়িয়া কলেজের শিক্ষক প্রশান্ত বাবুকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনগণের ধাওয়া খেয়ে অপহরণকারীরা গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে।’ তিনি বলেন, এক পর্যায়ে পুলিশ যোগ দেয় জনগণের সঙ্গে। পুলিশ গুলি চালালে দুই অপহরণকারী গুলিবিদ্ধ হয়। আরও ১০-১১ জনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় লোকজন। 

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রভাত কুমার দাস বলেন, ‘চার জন পুলিশ সদস্য ভর্তি আছেন। আর দু জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ভর্তি আছেন তাঁদের শরীরের বিভিন্ন জায়গা ছিলে গেছে, কালো দাগ পড়েছে। তবে অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। দুই-এক দিন রেখে তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে।’

‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুধু পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিরা নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকার মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাজ আলীর সাথে বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.