মুদিখানার পেছনে কথিত ব্রিটিশ জঙ্গীর আস্তানায়

গ্রামের একটা বাজারের মুদি দোকানের পেছনে একটা গুদাম ঘর। এক পাশে সার করে সাজিয়ে রাখা বড় বড় তেলের টিন। নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে, আলো-বাতাসহীন এই গুদাম ঘরের আরেক পাশে একটা খাট, ছোট জরাজীর্ণ একটি কাঠের টেবিল এবং একটি আলনা।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে গোপলার বাজারের এই গুদাম ঘরটিই ছিল বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার হওয়া কথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গী সামিউন রহমানের আস্তানা। লন্ডন থেকে আসা এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ গত সাত মাস এখানেই থাকতেন। ব্রিটেন থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তরুণ সিরিয়া বা ইরাকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের হয়ে লড়াই করতে গেছেন। এদের কেউ কেউ সেখানে লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের তৎপরতা সামিউন রহমানের গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত পুলিশের কাছেও ছিল অজানা।

বাংলাদেশের পুলিশের ধারণা, সামিউন রহমান বাংলাদেশে আসেন ইসলামিক স্টেটের জন্য জঙ্গী রিক্রুট করার জন্য। এর আগে গ্রেফতার হওয়া দুই বাংলাদেশি তরুণ তাদের সেই তথ্যই দিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা সামিউন রহমানকে গ্রেফতার করে।
তবে জঙ্গী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সামিউনের যোগাযোগের কথা শুনে গোপলার বাজারের মানুষ বিস্মিত।
যে মুদি দোকানের গুদাম ঘরে সামিউন থাকতেন, সেই দোকানেরই একজন কর্মচারি ফয়সাল আহমেদ।
“ আমি তো দেখছি তাইনের চলাফেরা বালা”, বলছিলেন তিনি। নিয়মিত তাকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার তাগাদা দিতেন সামিউন।
কিন্তু লন্ডন থেকে হবিগঞ্জের এক গ্রামে এসে এরকম একটি জায়গা কেন থাকার জন্য বেছে নিলেন সামিউন?
তার ভাইপো ফয়জুর রহমান জানান আতœীয়দের সাথে সম্পত্তির বিরোধ নিস্পত্তি করতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রায় সাত মাস আগে । কিন্তু বিরোধ নিস্পত্তিতে কোন অগ্রগতি হচ্ছিল না ।
লন্ডনে জন্ম ও বেড়ে উঠলেও তিনি সেখানকার সংস্কৃতিকে পছ্ন্দ করতেন না । হবিগঞ্জে সামিউনের একজন আতœীয় সে কথাই জানালেন । লণ্ডনের জীবনের চেয়ে বিভিন্ন আরব দেশে ঘুরে বেড়ানোই পছন্দ ছিল তার । সামিউনের ভাইপো ফয়জুর রহমান জানালেন কয়েকবার তিনি মরক্কো সফর করেছিলেন ।
গুদাম ঘরে বসবাস
প্রশ্ন উঠছে কেন তিনি বাজারের একটি মুদি দোকানের গুদামে থাকতেন?
সামিউন বাংলাদেশে আসার পর তার ভাইপো বাড়িতেই থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন । কিন্তু সেখানে থাকতে গেলে বাড়ির মহিলাদের সাথে দেখা হবে – এ কারনেই তিনি সেখানে থাকতে চাননি । ইসলামের প্রতি সামিউনের প্রবল ঝোঁক পরিবারকেও খানিকটা ভাবিয়ে তুলেছিল ।
ফয়জুর রহামন বলেন , “ অনেক সময় ওর মায় ফোন দিয়া কইত, এরে নিয়া তো সমস্যায় পড়ছি । খালি ইসলাম – ইসলাম দেখায়। ”
ইসলামের প্রতি প্রবল ঝোঁক থাকলেও সামিউনের চলাফেরায় এবং আচার –আচরন সন্দেহজনক মনে হয়নি ফয়জুর রহমানের । তিনি জানান সামিউন কোথাও যেতেন না কিংবা তার কাছেও কেউ কখনো আসেনি ।
গ্রামের যে মসজিদে সামিউন নামাজ পড়তে যেতেন, সেখানকার মুসল্লিরাও বিস্মিত তার জঙ্গী সম্পৃক্ততার কথা শুনে।
“ সামিউন নামও আমি জানতাম না । এটা পত্রিকায় দেখে জানলাম । তারে তো মসজিদে দেখতাম আমরা। আমরা তো আশ্চর্য অইলাম তার ব্যাপারটা দেইখা ”, বলছিলেন আবু সুফিয়ান নামে একজন।
বিল্লাল আহমেদ নামে আরেকজন বলেন , “ প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ – যদি তিনি জড়িত থাকেন তাহলে সুষ্ঠু বিচার হোক । আর যদি জড়িত না থাকেন তাহলে প্রবাসী ব্যক্তিকে এভাবে হয়রানি করা ঠিক হবে না । ”

বিবিসি বাংলা

No comments

Powered by Blogger.