আলোচনা বাতিল করল বিক্ষোভকারীরা

হংকংয়ের মংকোক বিপণিবিতান এলাকায় মুখোমুখি গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারী
(বাঁয়ে) ও বিক্ষোভের বিপক্ষের কর্মীরা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দৈনন্দিন
জীবনের ওপর টানা এক সপ্তাহের এ বিক্ষোভের নেতিবাচক প্রভাবে
অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের কেউ কেউ এখন বিক্ষোভের বিপক্ষে
অবস্থান নিচ্ছেন। গতকাল তোলা ছবি রয়টার্স
হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা গতকাল শুক্রবার রাতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে। চীনপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ ঘোষণা দেয়। এর আগে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইং বিক্ষোভকারী ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছিলেন। তবে তিনি পদত্যাগ করতে আবারও অস্বীকৃতি জানান। আন্দোলনকারী ছাত্রনেতারা গত রাতে অভিযোগ করেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে হংকংয়ের ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় কয়েক শ চীনপন্থী বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ছিঁড়ে ফেলে এবং ব্যানার নামিয়ে ফেলে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। বিক্ষোভকারী এবং চীনপন্থীরা পরস্পরের দিকে পানির বোতল ছুড়ে মারে। পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নিয়ে দুই পক্ষকে আলাদা করতে চেষ্টা করে। হংকং ছাত্র ফেডারেশন গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা আলোচনা বাতিল করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ অকুপাই আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার মাফিয়াদের হামলা চালাতে দিয়েছে। তারা আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং পরিণতির জন্য তারাই দায়ী হবে। এর আগে হংকং সরকার বুধবার বিক্ষোভকারীদের আলোচনার আমন্ত্রণ জানায়। তবে তখন আলোচনার সময় বা স্থান ঠিক করা হয়নি। আন্দোলনকারী অন্য গোষ্ঠীগুলো আলোচনা বাতিল করার ব্যাপারে গতকাল রাতে একমত হয়েছিল কি না, তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায়নি। গতকাল বৃষ্টি হওয়ায় এবং দুই দিনের সরকারি ছুটির শেষে লোকজন কাজে যোগ দেওয়ায় বিক্ষোভস্থলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কিছু কমে যায়। চীনপন্থী শিক্ষক ভিক্টর ম্যা (৪২) বলেন, ‘আমরা খুবই বিরক্ত। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আপনি হংকংয়ের বাসিন্দাদের জিম্মি হিসেবে আটকে রাখতে পারেন না। কারণ, লোকে কাজ করতে পারছে না। তাই আমরা বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ।’
চীনের সরকারি সংবাদপত্র পিপলস ডেইলি গতকাল এক ভাষ্যে বলেছে, আন্দোলনকারীরা ব্যর্থ হবে। প্রথম পাতায় প্রকাশিত ভাষ্যে লেখা হয়, ‘কয়েক দিন ধরে কিছু মানুষ হংকংয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে। তারা সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবিতে অবৈধ সমাবেশের আয়োজন করছে। এ ধরনের আচরণ স্পষ্টতই মৌলিক আইন এবং আইনের শাসনের লঙ্ঘন। তারা ব্যর্থ হবে।’ হংকংয়ের অর্থসচিব জন সাং সতর্ক করে দিয়ে গতকাল বলেন, বাণিজ্যিক কেন্দ্রে বিক্ষোভ চলতে থাকলে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হংকংয়ের অর্থনীতি স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লিউং চুন-ইং তাঁর পদত্যাগের জন্য বিক্ষোভকারী ছাত্রদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হওয়ার ঠিক আগে বলেন, তাঁর প্রধান সচিব ক্যারি লাম ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সাক্ষাৎ করবেন। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, কর্তৃপক্ষ আলোচনার প্রস্তাবের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা কমে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। চীনের তিব্বতে এবং শিনজিয়াংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আন্দোলন করে আসছে। হংকংয়ের আন্দোলন সেগুলোর মতো নয়। তার পরও এই আন্দোলন সফল হলে মূল ভূখণ্ডেও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এ নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের পথে হংকং
১৯৯৭: ১৯৮৪ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য হংকংকে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেয়। চুক্তিতে ৫০ বছরের জন্য সেখানে ‘উচ্চমাত্রার স্বায়ত্তশাসন’ বজায় রাখার কথা বলা হয়।
২০০৪ : চীন বলে, হংকংয়ের নির্বাচনী আইনে কোনো পরিবর্তন অবশ্যই তার অনুমোদন পেতে হবে৷
২০১৪ : জুলাই–আগস্ট মাসে গণতন্ত্রপন্থীরা একটি বেসরকারি গণভোটের আয়োজন করে। পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় দলই বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করে। ৩১ আগস্ট চীন ঘোষণা করে, ২০১৭ সালে হংকংয়ে প্রত্যক্ষ নির্বাচন করতে দেওয়া হবে। তবে প্রার্থীদের চীন অনুমোদন করবে।  ২২ সেপ্টেম্বর চীনের ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা সপ্তাহব্যাপী ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করে। ২৮ সেপ্টেম্বর ২৮ ‘অকুপাই সেন্ট্রাল’ আন্দোলনকারী এবং ছাত্ররা যৌথভাবে হংকংয়ের কেন্দ্রস্থল দখল করে নেয়।
২০৪৭ :  হংকং নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে করা চীনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।

No comments

Powered by Blogger.