৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মিলল কঙ্কাল

নগদ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েও অপহৃত শিশুপুত্র সনিকে জীবিত ফেরত পেলেন না তার বাবা শাহিন মিয়া। পেলেন না সন্তানের লাশটিও। পেলেন শুধু অবোধ শিশুসন্তানের কঙ্কাল আর মাথার খুলি। অপহরণের দীর্ঘ মাসাধিককাল পর গতকাল শনিবার মনোহরদী থানা পুলিশ একই উপজেলার ব্রাহ্মণেরগাঁওয়ের একটি জঙ্গল থেকে চার বছরের শিশু সনির এই কঙ্কাল উদ্ধার করেছে।

জানা গেছে, মনোহরদী উপজেলার পাইকান গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার সাথে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে সনির বাবা শাহিনের বিরোধ ছিল। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে মঞ্জিল মিয়া শাহিন মিয়াকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শিশু সনি বাড়ির আঙিনায় খেলা করার সময় মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী মাজেদা বেগম অন্য একটি শিশুকে দিয়ে সনিকে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। এরপর সনিকে গলাটিপে হত্যা করে একটি বস্তার ভেতর ভরে ছেলে হারিছকে নির্দেশ করে লাশটি ফেলে দেয়ার জন্য। ছেলে হারিছ সনির বস্তাবন্দী লাশ মোটরসাইকেলে উঠিয়ে ব্রাহ্মণেরগাঁওয়ের একটি জঙ্গলের ভেতর ফেলে চলে আসে। এরপর অপহরণকারী মঞ্জিল মিয়া, তার স্ত্রী মাজেদা বেগম মোবাইল ফোনে এই মর্মে মুক্তিপণ দাবি করে যে, বিকাশের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে শিশু সনিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। অন্যথায় সনিকে হত্যা করা হবে। সনির বাবা শাহিন সরল বিশ্বাসে বিকাশের মাধ্যমে নগদ ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে অপহরণকারীদেরকে জানান, সনিকে ফেরত দিলে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে। এরপরও অপহরণকারীরা তার কাছে আরো ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু সনিকে ফেরত না দেয়ায় সনির বাবা শাহিন তাদের দাবিকৃত বাকি ৫০ হাজার টাকা দেননি। এরপর সনির বাবা একাধিকবার মনোহরদী থানায় সনিকে অপহরণ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু পুলিশ তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। এ নিয়ে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। পুলিশ সনির কোনো হদিস করতে পারেনি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মনোহরদী থানার এসআই তানভির আহমেদ মঞ্জিল মিয়াকে গ্রেফতার করে। এরই সূত্র ধরে গ্রেফতার করে তার ছেলে হারিছ মিয়া, স্ত্রী মাজেদা বেগম এবং কন্যা সুমাসহ সাতজনকে। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মনোহরদী থানা পুলিশ শনিবার বেলা ১১টায় শিশু সনির কঙ্কাল, মাথার খুলি, পরনের কাপড় এবং একটি বস্তা ব্রাহ্মণেরগাঁওয়ের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর সনির বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের গগনবিদারী চিৎকারে পাইকান গ্রামের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শত শত মানুষ তাদের বাড়িতে ভিড় জমান।

No comments

Powered by Blogger.