উই ওয়ান্ট টু রিপ্লেস বিএনপি : এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যেই আমরা জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে চাই। ১১ জেলার কাউন্সিল হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে জেলার সব কাউন্সিল হবে। মার্চ মাসের মধ্যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য তৈরি হবে এবং দেশ শাসন করবে। আমাদের টার্গেট ১৫১ আসন। মানুষ দুই দলের কাছ থেকে মুক্তি পেতে চায়। আগামী নির্বাচনে আমরা ভালো করতে চাই। বিএনপির আন্দোলন করার শক্তি নাই। নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে তারা বিপর্যস্ত। তাদের সেই দুরবস্থার সুযোগ আমরা নিতে চাই। উই ওয়ান্ট টু রিপলেস বিএনপি। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি রংপুরের বাসভবন পল্লীনিবাসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন। দেশের মানুষের এখন নিরাপত্তার অভাব, প্রতিদিন মানুষ খুন জখম হচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকারের বড় দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি দখল হচ্ছে, নদী দখল হচ্ছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেক কমেছে, নানা কারণে, এমন পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। এ জন্য আমরা স্লোগান দিয়েছি শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি। আর সে জন্য জাতীয় পার্টির দরকার ১৫১টি আসন। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আমরাই প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি মুরতাদ দাবি বরে ফাঁসি চেয়েছি। বিএনপি করেনি। সরকার তার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে আন্দোলনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর ঘটনা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় আঘাত হেনেছে।
এরশাদ বলেন, দেশের অবস্থা ভালো নয়, মানুষও ভালো নেই। সন্ত্রাস দুর্নীতি ও দলীয়করণে দেশ ছেয়ে গেছে। এর বিপরীতে জনগণের কাছে প্রয়োজন জাতীয় পার্টির। আমরা দলকে সংগঠিত করব। আমরা রংপুরে মিলেমিশে সবাইকে নিয়ে দলকে সংগঠিত করতে চাই। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। তিনি বলেন, বিএনপির কোনো জোরাল আন্দোলন নেই। তারা কথা বলে সময়ক্ষেপণ করছে মাত্র। বিএনপির ওপর মানুষের আস্থা নেই। নির্বাচনের আগে এরশাদ নির্বাচনে না দাঁড়ানোর বিষয়ে বললেও গতকাল তিনি অভিনব তথ্য দিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমতে এবার আমি রংপুরের এমপি। এর আগে জেলখানায় ছিলাম। আপনারা দুইবার এমপি করেছেন। আমার ভাই আমার বউকে এমপি করেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে কিছুই করা যায়নি। এবার প্রথম আপনারা আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। আপনারা সরাসরি আমার ভোটার। আমি আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে চাই। আগামী নির্বাচন হবে আমার শেষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনেও আপনারা আমাকে জয়ী করবেন। আমি আপনাদের কাছে এখন প্রতি মাসে সাত দিন থাকব। প্রতি বাড়ি বাড়ি যাবো। আমি আরেকবার সুযোগ চাই।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সভাপতি হিসেবে দুই দিনের সফরে তিনি রংপুরে আসেন। এ সময় জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, মহানগর আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা সদস্যসচিব সাবেক এমপি এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, মহানগর সদস্যসচিব এস এম ইয়াসিরসহ এরশাদ অনুমোদিত কমিটির বিপুল নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তফা ইয়াসিরকে বাদ না দিলে পদত্যাগ : অপর দিকে বেলা সাড়ে ১১টায় এলজিআরইডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা সমর্থিত সাবেক জেলা ও মহানগর কমিটি জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিলুপ্ত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন কাদেরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল ইসলাম, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি শামীম সিদ্দিকী, জাতীয় যুব সংহতির ইউসুফ আহমেদ, শ্রমিক পার্টির সেক্রেটারি রাজু আহমেদ প্রমুখ। এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রংপুরে জাতীয় পার্টিতে স্যারের নেতৃত্ব ও তার পারিবারিক নেতৃত্বকে মেনে নেবো। কিন্তু যারা অতীতে সংবাদ সম্মেলন করে তৃণমূল জাতীয় পার্টি গঠন করেছিল তাদের আমরা মেনে নেবো না। বিশেষ করে মোস্তফা ও ইয়াসিরের নেতৃত্বকে আমরা মানব না। তাদের রাখা হলে আমরা স্যারের কাছে আমাদের পার্টি থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। স্যার যদি না দেন তবে আমরা পদত্যাগ করব।
প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর এলজিআরইডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতিও ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আসছে রংপুরে।

No comments

Powered by Blogger.