ধর্মনিরপেক্ষতা আওয়ামী লীগের মুখোশ -খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি মানে ধর্মহীনতা। ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশে তারা মন্দিরে হামলা চালায়, লুটপাট করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করে। আর বিএনপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। সবার সাথে রয়েছে এ দলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুভ বিজয়া উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠসহ বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপের অর্ধ শতাধিক পুরোহিত অংশ নেন।
বিএনপির অঙ্গসংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে গাজীপুর, নেত্রকোনা, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, শরীয়তপুর, নড়াইল, বরগুনা, বাগেরহাট, রংপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলার সহস্রাধিক নেতাকর্মী এই মতবিনিময় সভায় আসেন।
অনুষ্ঠান শুরু হয় চণ্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে। বিকেল ৫টার কিছু পরে খালেদা জিয়া মঞ্চে আসার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীদের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। খালেদা জিয়া তাদের মিষ্টি দিয়ে আতিথেয়তা করেন। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পরে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সবাইকে শুভ বিজয়ার অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। এখন সর্বত্র গুম-খুন-লুটপাট চলছে। এই জবরদখলকারী সরকারের হাতে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসুন এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করি।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। নিজের ধর্মকে আমরা যেভাবে দেখি, অন্য ধর্মকেও একইভাবে ভালোবাসি। অথচ অন্য অনেক দল আছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে অন্য ধর্মের ওপর হামলা করে অন্য দলের ওপর দোষ চাপায়। তাদের ঘরবাড়ি, মন্দির-উপাসনালয় দখল করে। অর্থাৎ তাদের ওই ধর্মনিরপেক্ষতা একটি লোক দেখানো বিষয় ছাড়া কিছুই নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি পুরান ঢাকায় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড এবং নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাত খুনের ঘটনার কথা তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সব ধর্মের লোকজনকে নিয়ে আমরা এ দেশ গড়ে তুলবো। বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছেÑ সব ধর্ম ও সব দেশের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। আমরা ঐক্য ও সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। সম্প্রীতির এই বন্ধন সব সময় আমরা অটুট রাখতে চাই।
রাজধানীর রমনা কালীমন্দির পুনঃস্থাপনে বিএনপি সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর রমনা কালীমন্দির গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আমাদের শাসনামলে ওই মন্দির পুনঃস্থাপন করেছি।
এ ছাড়া মন্দিরভিত্তিক পাঠাগার, মন্দির সংস্কারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার শাসনামলে নারীশিক্ষা উন্নয়নে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের সুবিধাদি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়কে বলবো, বিএনপির সাথে থাকলে অন্য দলের পার্থক্য বুঝবেন। বিএনপি সব ধর্মের দল। আমাদের সময় জনগণের সরকার ছিল, দলীয় কিংবা ব্যক্তিবিশেষের সরকার ছিল না। ভবিষ্যতে আমরা সবাইকে নিয়ে জনগণের সরকার গঠন করতে চাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সারা দেশের সব ধর্মের মানুষের ওপর এই সরকার আঘাত করছে। হিন্দুদের জমি-জমা-মন্দির তারাই দখল করছে। তারা (ক্ষমতাসীন) এমনো বলে, তোরা হিন্দু হয়ে বিএনপি করবি কেনো?
এ সময় মঞ্চের সামনে কয়েকজন চিৎকার করে বলেন, ম্যাডাম আমরা বিএনপি সমর্থন করি বলে আমাদের আওয়ামী লীগ হিন্দু রাজাকার বলে। ওই সময় খালেদা জিয়া বলেন, এ হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্তকুমার দেব, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক, রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী গুরু সেবানন্দ (মৃদুল মহারাজ), স্বামী দিব্যযোগানন্দ (অরুন মহারাজ), জগন্নাথ দেবের মামীর বাড়ির মন্দিরের শ্যামসুন্দর দাস বাবাজী, ইনকনের মাধব মুরারী দাস, সুমুখ গৌরাঙ্গ দাস, নিত্যানন্দা কিশোর দাস, দয়ানিধী দাস ব্রহ্মচারী, সাধুমন্য কুমার দাস, বাসুদেব সুনন্দী, ধানমন্ডি পূজা কমিটির সভাপতি তপনকান্তি সরকার, কুমুদিনী ট্রাস্টের অনিক ব্রাহ্মণ, সুব্রত সাহা, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের গৌবিন্দ পারামাণিক, শেফালী দাস, বিু নন্দলাল ব্রহ্মচারী, সাবেক সংসদ সদস্য গণেশ হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব বিজনকান্তি সরকার, সাংবাদিক সন্দ্বীপ চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর সারিকা সরকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী, উপদেষ্টা নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, নিতাইচন্দ্র ঘোষ, অমলেন্দ্র রায় চৌধুরী, দেবাশীষ রায় মধু, নুকুল সাহা, রমেষ দত্ত এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, হাবিব উন নবী খান সোহেল, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, সুলতানা আহমেদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.