১৭০০ গার্মেন্টে ৮০,০০০ সমস্যা

পশ্চিমা ক্রেতাদের পরিদর্শনে বাংলাদেশের ১৭০০ পোশাক কারখানাতে ধরা পড়েছে নিরাপত্তা সমস্যা বা ঝুঁকি। এসব সমস্যা ছোটখাটো  থেকে প্রকট। এমন সমস্যার সংখ্যা ৮০ হাজারেরও বেশি। এ সমস্যা সমাধান করতে গড়ে প্রতিটি কারখানায় প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তা ১০ লাখ ডলারও হতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় ১৭০০ পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষ করেছে পশ্চিমা দু’টি গ্রুপ। এরা হলো এইচঅ্যান্ডএম এবং কেয়ারফোর সহ ৮৯টি করপোরেট সদস্যের গ্রুপ বাংলাদেশ একর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি। এ গ্রুপে মূলত ইউরোপীয়দের প্রাধান্য রয়েছে। অন্য গ্রুপটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের গ্রুপগুলোর প্রাধান্য নিয়ে গঠিত দ্য এলায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি। এ নিয়ে গতকাল নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসিসহ বিদেশী মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ একর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি পরিদর্শন করেছে ১১০৬টি কারখানা। গতকাল তারা বলেছে, এসব কারখানায় তারা ৮০ হাজারেরও বেশি সমস্যা পেয়েছে। অন্যদিকে ওয়াল মার্ট, গ্যাপ ও টার্গেট সহ ২৬ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এলায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি। তারা এ বছরের জুলাইয়ে পরিদর্শন করেছে ৫৮৭টি কারখানা। এসব গ্রুপ নিরাপত্তা, আর্থিক খাতে উন্নয়নের জন্য কাজ করছে বাংলাদেশের কারখানা মালিকদের সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছে ফায়ারপ্রুফ দরজা। বাংলাদেশে যেসব গার্মেন্ট কারখানা ৭৫ ফুট বা তার চেয়েও বেশি উঁচু সে সব কারখানায় এমন দরজা থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশ একর্ডের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান পরিদর্শক ব্রাড লোয়েন বলেন, আমরা যে সব কারখানা পরিদর্শন করেছি তার সবটায় সমস্যা পাওয়া গেছে। এর মাত্রা স্বল্প থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এলায়েন্স ফর বাংলাদেশের সিনিয়র উপদেষ্টা ইয়ান স্পাউল্ডিং বলেছেন, পরিদর্শন করাটা সহজ কাজ। কিন্তু তার পরের কাজটি অনেক কঠিন। একর্ডের আন্তর্জাতিক অপারেশন বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক অ্যালান রবার্টস বলেন, এসব কারখানার নিরাপত্তার মান উন্নত করতে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার থেকে ১০ লাখ ডলার করে লাগবে প্রতিটি কারখানায়। এ জন্য প্রতিটি কারখানার মেশিনারিজ সরাতে হবে। যেসব কারখানায় অতিরিক্ত পোশাক জমা আছে তা সরাতে হবে। অন্য দিকে আগুন নিভানোর জন্য পানি ছিটানোর যন্ত্র থাকতে হবে। বসাতে হবে স্বয়ংক্রিয় এলার্ম সিস্টেম। যেসব কলামের ওপর ভর করে ভবন দাঁড়িয়ে আছে তার শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে ১১২৯ জন নিহত হওয়ার পর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ভোক্তা গ্রুপগুলো পোশাক ক্রেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে এলায়েন্স বোর্ডের চেয়ারপারসন ও সাবেক কংগ্রেস পারসন ইলেন তুষার বলেন, দীর্ঘদিন এ সব কাজ করা হয়নি। ফলে এ সংস্কার করতে এখন আমাদেরকে কঠোর কাজ করতে হচ্ছে। এর আগে এলায়েন্সের সমালোচনা করেছিলেন একর্ডের অনেক কর্মকর্তা। তারা অভিযোগ করেছিলেন যে, একর্ডের মতো তীব্র হবে না এলায়েন্সের পরিদর্শন। কিন্তু এ সপ্তাহে এলায়েন্স কর্মকর্তারা বলেন যে,ত তাদের পরিদর্শকরা বাংলাদেশের পর্যালোচনা কমিটিকে ১৭টি কারখানা অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ করে দিতে সুপারিশ করেছে জরুরি নিরাপত্তা সমস্যার কারণে। একর্ডের তুলনায় এ হার অনেক বেশি। একর্ড পরিদর্শন করেছে ১১০৬টি কারখানা। এর মধ্যে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বলেছে ২৪টি। এর মধ্যে ৪টি রয়েছে স্থায়ীভাবে বন্ধ। একর্ড সদস্যরা যেসব কারখানায় পোশাক প্রস্তুত করায় তার কমপক্ষে ১০০টি কারখানা এখনও পরির্শন বাকি। সে জন্য তারা পরিদর্শন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের একটি অঙ্গ সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন। তারা স্বল্প সুদে নিরাপত্তার মান উন্নত করতে ঋণ দেবে বাংলাদেশী মালিকানাধীন কারখানাকে। একর্ডের রবার্টস বলেন, বেশির ভাগ কারখানার মালিকরা সহযোগিতা করেছেন এটাই শেষ কথা। তারা এ উদ্যোগকে তাদের কারখানার উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন। তবে এ উদ্যোগের বিরোধিতা করছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন বা বিজিএমইএ। তারা মনে করে এর মাধ্যমে এ কারখানার ক্ষতি হবে। একর্ড বা এলায়েন্স সরাসরি পোশাক তৈরি করায় না এমন ১৫০০ কারখানা পরিদর্শন করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। একে বলা হচ্ছে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা মাত্র ৪০০ কারখানা পরিদর্শন করেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা এসব কারখানা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়া পরিকল্পনার চেয়ে ধীর গতির। ফলে পরিদর্শন শেষ করতে বিভিন্ন কোম্পানিকে আহ্বান জানানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। 

No comments

Powered by Blogger.