আমিরা হকের পদত্যাগ ডিপ্লোম্যাটিক ডিজাস্টার by কাউসার মুমিন

বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান কর্মকর্তা জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট’ বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমিরা হক-এর পদত্যাগের সংবাদে জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং দপ্তরের বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ই জুলাই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপদের নিয়োগ/পদত্যাগবিষয়ক এক ঘোষণায় বলেন, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক নিজে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সে মোতাবেক তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত মহাসচিবকে অবহিত করেছেন। ওই ঘোষণায় মহাসচিব জাতিসংঘ ব্যবস্থার অধীনে চাকরিকালে আমিরা হকের গত ৩৮ বছরের অসামান্য অবদানকে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। কিন্তু মহাসচিবের ঘোষণায় বিশেষ করে কি কারণে আমিরা হক হঠাৎ করে এ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে বিষয়ে কোন কারণ উল্লেখ না থাকায় পদত্যাগের বিষয়টি এরই মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশকালে গত ১৫ই জুলাই বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে পদত্যাগের কারণ উল্লেখ না করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুনাম অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা ইনারসিটি প্রেসের গত ১৫ই জুলাই প্রকাশিত এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের দুটি শক্তিধর সদস্য রাষ্ট্র ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইন্টারনাল পাওয়ার স্ট্রাগল-এর কারণে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের চাপের মুখে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানবজমিন-এর পক্ষ থেকে গত দুই দিন জাতিসংঘ সদর দপ্তর, মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়, ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট, ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং, বার্তা সংস্থা ইনারসিটি প্রেস, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে পদত্যাগের প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য ও মন্তব্য প্রদানকারী সবার বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলত জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদে বাংলাদেশী একজন কর্মকর্তাকে বহাল রাখার মতো প্রয়োজনীয় ‘ডিপ্লোম্যাটিক লেভারেজ’ এখন আর বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের হাতে নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জাতিসংঘ কূটনীতি দারুণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন এখানকার কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

উল্লেখ্য, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় তিন দশক ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত অসামান্য ভূমিকার অংশ হিসেবে এক যুগ ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারগুলো জাতিসংঘের সিভিল ও মিলিটারি সার্ভিসের বিভিন্ন উচ্চপদে বাংলাদেশীদের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত পাঁচ বছরের জাতিসংঘ বক্তৃতার সব কয়টিতেই এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ ব্যবস্থার অধীনে চাকরির পূর্ব অভিজ্ঞতার বিবেচনায় এবং বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশী কর্মকর্তা আমিরা হককে গত ১১ই জুন ২০১২ জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট) পদে নিয়োগ দেন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে আমিরা হক পূর্বতিমুরে অবস্থিত জাতিসংঘ শান্তি মিশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু জাতিসংঘের প্রথা মোতাবেক অন্যান্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলরা যেখানে কমপক্ষে ৪ থেকে ৭ বছর দায়িত্ব পালন করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২ বছর ৩ মাসের মাথায় আগামী অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সিনিয়র পদে নিয়োগসংক্রান্ত অনলাইন বিজ্ঞপ্তিতে ‘আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট) পদে আগ্রহী যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের আগামী ২০শে আগস্টের মধ্যে আবেদনপত্র দাখিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এ পদে আবারও একজন মহিলা প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাতিসংঘের ডেপুটি স্পোকপার্সন ফারহান হক গতকাল মানবজমিন-এর প্রতিনিধিকে বলেন, ভেতর বা বাইরের কোন চাপ থেকে নয়, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক নিজে থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘আমিরা হক এখনও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং তার পক্ষ থেকে আপনি কি বলবেন কেন তিনি হঠাৎ করেই তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং মহাসচিবই বা কেন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, এ প্রশ্নের জবাব আমিরা হক নিজেই ভাল দিতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে তার পদত্যাগ বিষয়ে মহাসচিবের পক্ষ থেকে বা অন্য কারও পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই। ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে মূলত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সর্বোচ্চসংখ্যক সৈন্য পাঠিয়ে থাকে। সে হিসেবে ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে দক্ষিণ এশিয়ারই অন্য একটি দেশ বাংলাদেশের নাগরিক থাকায় এখানে কোন ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টস’ তৈরি হয়েছিল কিনা, যার ফলে আমিরা হককে আগাম পদত্যাগ করতে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘ সিস্টেমে দায়িত্ব পালনকালে এমন অবস্থা সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমিরা হক নিজে থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইনারসিটি প্রেস-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ম্যাথিউ রাসেল লি এ প্রতিনিধিকে লিখিত বার্তায় বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষার কাজে সহযোগিতার জন্য সদর দপ্তরে বর্তমানে দুটি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। একটি হলো ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস এবং অপরটি ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার প্রয়োজনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গত ২০১০ সালে ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং’ ভেঙে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট’ নামে আরেকটি বিভাগ সৃষ্টি করেন। কিন্তু এর আগ থেকেই অবিভক্ত ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে কর্মরত ছিলেন ফ্রান্সের নাগরিক হার্ভে লাডসুস। তিনি এখনও এ ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ পদে তিনি আজ ৭ বছর ধরে চাকরি করছেন, যদিও সেক্রেটারি জেনারেল নিয়ম করেছিলেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের একই পদে কেউ সর্বোচ্চ ৫ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না।
লিখিত বার্তায় ম্যাথিউ লি আরও বলেন, চাপের মুখে আমিরা হকের পদত্যাগের সম্ভাবনা বিষয়ে আমি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে গত ৭ই অক্টোবর ২০১৩ প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করি। পরে ১৩ই অক্টোবর ২০১৩ তারিখে আরও তথ্য সূত্র উল্লেখ করে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করি এবং মহাসচিবের ঘোষণার একদিন আগে গত ১৪ই জুলাই ২০১৪ তারিখে এ বিষয়ে আমার সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোতে আমি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে বলেছি, ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্সের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফরাসি নাগরিক হার্ভে লাডসুস, যিনি একই পদে ৭ বছর ধরে নিয়ম ভেঙে কর্মরত আছেন, তিনি ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হককে সরিয়ে দেয়ার জন্য বহুদিন থেকেই ফন্দিফিকির করছেন। কেননা তিনি উভয় বিভাগের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ চান কিংবা এমন একজনকে তিনি ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্টের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে পেতে চান, যার ওপর তিনি দাদাগিরি করতে পারবেন।
ম্যাথিউ লি-এর রিপোর্টে আরও বলা হয়, অন্যদিকে ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স-এ দীর্ঘদিন ধরে একজন ফরাসি নাগরিক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’-এর জন্য ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট-এর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কেননা ফরাসি নাগরিক লাডসুস হচ্ছেন ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিংয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে পরপর দায়িত্ব পালনকারী চতুর্থ ফরাসি, তার আগে এ পদে আরও তিনজন ফরাসি নাগরিক তিন মেয়াদে চাকরি করে গেছেন। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র এ পদের সমমানের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট) পদটি নিজেদের দখলে নিতে চায়। এভাবে শক্তিশালী দুই রাষ্ট্রের চাপে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বর্তমানে ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্টের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে কর্মরত বাংলাদেশী আমিরা হককে পদত্যাগের কথা বলেন। জাতিসংঘ সিস্টেমের খবর সংগ্রহে বহু দিনের অভিজ্ঞ এবং সদর দপ্তরের সুপরিচিত সাংবাদিক ম্যাথিউ রাসেল লি আরও বলেন, আমি মনে করি এর ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্য প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে তার ন্যায্য অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ তার স্বাভাবিক কূটনৈতিক শক্তি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা শক্তিধর দেশের কাছে নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। কারণ সব দিক বিবেচনায় এ পদটি মেয়াদ শেষ না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রাপ্য।
এদিকে গতকাল ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ভে লাডসুসের অফিসে আমির হোক-এর পদত্যাগের কারণ জানতে যোগাযোগ করা হলে ‘আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের নেপাল সফর নিয়ে আমরা এ মুহূর্তে খুব ব্যস্ত আছি’ বলে উল্লেখ করে এ প্রতিনিধিকে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। উল্লেখ্য, নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংবিধান প্রণয়নের অগ্রগতি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কিভাবে নেপাল আরও অধিকসংখ্যক সৈন্য পাঠাতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার জন্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ভে লাডসুস দুই দিনের সফরে আগামী ২১শে জুলাই কাঠমান্ডু সফরে যাচ্ছেন।
পদত্যাগের প্রকৃত কারণ জানতে গতকাল মানবজমিন-এর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের পাবলিক এফেয়ার্স অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সবগুলো কন্টাক্ট পয়েন্টে যোগাযোগ করা হয়। একপর্যায়ে কার্যদিবসের শেষের দিকে এ প্রতিনিধিকে কলব্যাক করেন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক নিজেই। আলোচনায় আমিরা হক এ প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি ৩৮ বছর ধরে জাতিসংঘের অধীনে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। এবার তিনি বিশ্রাম চান, তাই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তে কারও কোন চাপ নেই। ‘এ পদে বর্তমানে নতুন করে লোক নেয়া হচ্ছে, আপনি কি মনে করেন কোন বাংলাদেশী আবারও এ পদের জন্য নিয়োগ পেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে আমিরা হক বলেন, এখন উন্মুক্ত পদ্ধতিতে প্রার্থিতা আহ্বান করা হচ্ছে। সুতরাং যোগ্যতম ব্যক্তিই নিয়োগ পাবেন। কোন বিশেষ দেশকে বিবেচনায় নেয়া হবে বলে মনে হয় না- ‘আপনি কি দায়িত্ব পালন করতে কোন বাধা বা প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায় আপনি কেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনার গত দুই বছরের অর্জন সম্পর্কেও আমরা জানতে চাই’- এমন প্রশ্নের জবাবে আমিরা হক বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আমরা না হয় অন্য একদিন বসি, এক্সক্লুসিভলি কথা বলি।
এদিকে আমিরা হক-এর পদত্যাগের ফলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে কিনা, কিংবা পদত্যাগ এড়াতে সরকারের কিছু করার ছিল কিনা- এ বিষয়ে জানতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় এবং স্থায়ী প্রতিনিধি ডক্টর আবদুল মোমেনের ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করে মেসেজ রাখা হলেও তিনি ফিরতি ফোন করেননি। পরে মধ্যরাতে নিউ ইয়র্কের একটি স্থানীয় বাংলা মিডিয়ার ফোন থেকে ফোন করলে রাষ্ট্রদূত ডক্টর মোমেনকে পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রদূত মোমেন এ বিষয়ে বলেন, আমিরা হক-এর পদত্যাগ বিষয়ে ইনারসিটি প্রেস যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তা সঠিক নয়। ডক্টর মোমেন বলেন, আমিরা হক নিজেই চাকরিতে থাকতে চান না। তিনি ২ বছর তিন মাস সার্ভিস শেষে আগামী অক্টোবরে পদত্যাগ করবেন। এ পদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা শেষ করতে আরও প্রায় দেড় বছর বাকি। এ সময়ের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব কোন ইন্টারনাল প্রার্থীকে নিয়োগ দেবেন বলে আমি শুনেছি।
উল্লেখ্য, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো জাতিসংঘ মহাসচিব নিজে নিয়োগ দিলেও প্রার্থীদের কান্ট্রি অব অরিজিনের সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগের পক্ষে শক্তিশালী লবিংয়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রার্থীর যোগ্যতা আর লবিং-এ দুয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় এ ধরনের নিয়োগগুলো চূড়ান্ত হয়। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যেখানে জাতিসংঘের উচ্চপদে বাংলাদেশী নিয়োগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এসেছে বাংলাদেশ, সেখানে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে এমন একজনকে কেন সমর্থন দেয়া হলো যিনি দুই বছরের বেশি চাকরি করতে চান না। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি যদি আগে থেকেই সরকারের জানা থাকে তাহলে অবশিষ্ট সময়ের জন্য একজন উপযুক্ত বাংলাদেশীকে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগের চেষ্টা করলো না কেন বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মূল ঘটনা এখানে নয়, অন্যত্র। মূলত ৫ই জানুয়ারির একপক্ষীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। তাই স্বাভাবিক ডিপ্লোম্যাটিক লেভারেজ প্রয়োগ করতে পারছে না। জানা গেছে, এর প্রভাব পড়েছে আগামী বছর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে বাংলাদেশের নির্বাচনেও। আগামী ২০১৫ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে বাংলাদেশকে সমর্থনকারী দেশের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় আটকে আছে দীর্ঘদিন। নতুন করে সমর্থন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে দিনকে দিন। তাই এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এশিয়ার অন্য একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিশেষ এরেঞ্জমেন্টে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে তো? না কি আবারও অপেক্ষা করছে আরও বড় কোন ডিপ্লোম্যাটিক ডিজাস্টার।

No comments

Powered by Blogger.