ইউক্রেনের আকাশ বয়কট

২৯৫ জন যাত্রী নিয়ে ইউক্রেনের দনেস্ক শহরে এমএইচ-১৭ ভেঙে পড়ার পেছনে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে নাশকতার তত্ত্ব। রুশপন্থী বিদ্রোহীরাই ক্ষেপণাস্ত্র হেনে বিমানটি নামিয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উঠেছে জঙ্গি নাশকতার দাবি। এ অবস্থায় হিংসাকবলিত অঞ্চল এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। ইউক্রেনের আকাশপথে বিমান চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল এয়ারইন্ডিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফথানসা, এয়ার ফ্রান্স, এরোলফট ও ট্রান্সাএরো (রাশিয়া), টার্কিশ এয়ারলাইন্স, ডেল্টা, আলিতালিয়া (ইতালি)। একই পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রতিটি বিমান সংস্থা। এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু অঞ্চলের আকাশে বিমান চলাচলে ঝুঁকির বিষয়ে কয়েক মাস আগেই বৈমানিকদের সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি সংস্থা।
গত এপ্রিলের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইউক্রেনের আকাশসীমায় উড্ডয়নের ব্যাপারে দেশটির বিমান পরিবহন কোম্পানিগুলোর বিশেষ সতর্কতা জারি করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশেষ অনুমোদন ছাড়া ইউক্রেন থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সিমফেরোপোলসহ আরও কিছু এলাকার ওপর দিয়ে উড্ডয়ন থেকে বিরত থাকতে বলা হয় তাদের। ২৩ এপ্রিলের ওই বিশেষ বার্তায়, ২০১৫ সালে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ওই সতর্কতা বহাল থাকবে বলে বলা হয়। যাত্রীর পাঠানো শেষ ভিডিও : ইউক্রেনে বিধ্বস্ত মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানটির শেষ দৃশ্য ধারণ করেছিলেন ৩০ বছর বয়সী এক যুবক। বিমানটি আমস্টারডাম থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দৃশ্য ধারণ করেছিলেন মোঃ আলী মোঃ সেলিম। শনিবার মালয়েশীয় ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য স্টার অনলাইন এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আপলোড করা সেলিমের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রীরা মাথার ওপরের কম্পার্টমেন্টে নিজেদের ব্যাগপত্র রাখছেন। ইনস্টাগ্রাম ভিডিওর যে ক্যাপশন লেখা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে, দৃশ্য ধারণকারী যুবক বিমানে করে দেশে ফেরা নিয়ে নিজের অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ক্যাপশনে লেখা আছে, বিসমিল্লাহ... কিছুটা নার্ভাস লাগছে। ওই ভিডিওটি এখন ইউটিউব এবং ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি ঘোষণা ভেসে আসছিল,
সম্ভবত তা পাইলটের কণ্ঠ হবে। যাত্রী উঠানো ও মাল বোঝাই করার শেষপর্যায়ে রয়েছি আমরা। আবারও বলছি, অনুগ্রহ করে সবার মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ করে নিন। এর পরই ভিডিও দৃশ্যটি শেষ হয়ে যায়।মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৭ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২৯৮ আরোহীর সবাই নিহত হওয়ায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দিনটিকে শোকের দিন ও চলতি বছরকে মালয়েশিয়ার জন্য শোকের বছর হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাজাক। তিনি দিনটিকে একটি শোকাবহ দিন এবং ২০১৪ সালকে মালয়েশিয়ার জন্য একটি শোকতপ্ত বছর হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এ দুর্ঘটনার পূর্ণ তদন্ত প্রত্যাশা করে বলেন, এ ঘটনার তদন্তকে কোনোভাবেই বিপথে যেতে দেয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আন্তর্জাতিক বেসামরিক উড্ডয়ন সংস্থা বিমানটির যাত্রাপথকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ঘোষণা করেছিল। এছাড়া বিমানটি থেকে কোনো বিপদ সংকেতও আসেনি। তার দেশ এ মুহূর্তে শোকাবহ এ ঘটনার সঠিক কারণ উদ্ধার করতে না পারলেও, অচিরেই উদঘাটিত হবে, এবারের বিমানটির ভাগ্যে কি ঘটেছে। শোনা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষের বিমান ভেবে ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী কিংবা সশস্ত্র রুশপন্থী- এ দুই পক্ষের কোনো এক পক্ষ ওটাকে উদ্দেশ্য করে বিস্ফোরক ছুড়েছে। যে কারণে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্র“টির রেকর্ডবিহীন বিমানটি ইউক্রেন সীমান্তে বিধ্বস্ত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.