তাপস পালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই নেয়নি তৃণমূল

তাপস পালের
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সদস্য চলচ্চিত্র অভিনেতা তাপস পালের আপত্তিকর মন্তব্যের আরেকটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, সিপিএমের নেতা-কর্মীদের হত্যা করতে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এর আগে প্রকাশিত ভিডিওতে তিনি সিপিএমের নারীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তবে এত কিছুর পরও তাপস পালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। গতকাল তৃণমূলের বৈঠকে তাঁর বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বৈঠকে শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাপস পাল নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এটা তাপস পালের বিরুদ্ধে মিডিয়ার ষড়যন্ত্র।
এর মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, মুখ্যমন্ত্রী মমতাসহ গোটা দলই তাপস পালের পাশে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন মমতা বলেছিলেন, তিনি চান, তাপস পাল তাঁর ওই মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তবে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেছিলেন, ‘তাঁর ব্যাপারে আমার কী করা উচিত বলে আপনারা মনে করেন? আমি তাঁকে খুন করব?’ নতুন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একই দিন তাপস পাল নদীয়া জেলার তেহট্ট থানার গোপীনাথপুরে প্রায় একই ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণ করেন। কলকাতার এই অভিনেতা বলেন, ‘যত দিন তাপস পাল আছে, তত দিন সিপিএমের বাচ্চাদের ছাড়বেন না। আর মেয়েদেরও বলছি, বঁটি চেনেন? বঁটি দিয়ে গলা কাটতে হয়। কেলিয়ে দাওনি কেন? ভোজালি চালাতে পারো না? সিপিএম কতজনকে মেরেছে, তা দেখাবেন না? সিপিএমের বাচ্চাদের মেরে দেখান তো। হাতে টাঙি, ভোজালি দিয়ে স্টার্ট দিন। আমার নাম তাপস পাল। টাঙি চালিয়ে মাথা ভাগ করে দেব। আমি রংবাজি করি। যদি কেউ আমাদের ছেলেদের মারে, আমি ছেড়ে কথা বলব না। ছয়টা গুলি চালাব। মার্ডার করে যাব। আমি আবার আসব। আমি বারবার বলে গেলাম, কুড়ুল দিয়ে মাথা নামিয়ে দিন।’ তাপস আপত্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যে অপরাধ করেছেন, তাতে লোকসভা চাইলে তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যেতে পারে। লোকসভার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল সুভাস কাশ্যপ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদ যা বলেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
লোকসভা চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে চরম শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারে।’ কাশ্যপ আরও বলেন, ‘সংসদের অধিবেশন চলাকালে কোনো দল বা সদস্য তাপসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাপস পালের বক্তব্য জানতে চাইবেন। সাংসদের বক্তব্য পেলে তা বিচারের জন্য স্পিকার প্রিভিলেজ কমিটি অথবা এথিকস কমিটির কাছে পাঠাবেন। সংশ্লিষ্ট কমিটি যদি সাংসদের সদস্যপদ খারিজের মতো চরম সুপারিশ করে, স্পিকার তখন তা অনুমোদনের জন্য সভার মতামত জানতে চাইবেন। লোকসভার অধিকাংশ সদস্য মত দিলে তাপসের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।’ তাপস পালের এসব মন্তব্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলছে বিক্ষোভ-সমাবেশ। তাঁর হুগলির চন্দননগরের বাড়ির সামনে গতকাল বুধবার পোড়ানো হয়েছে কুশপুত্তলিকা। কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী শমিত সান্যাল। এর আগে মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন থানায় তাপস পালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিজেপি, বামফ্রন্টসহ বিভিন্ন মহিলা সংগঠন। গতকাল রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তাপস পালের গ্রেপ্তার ও লোকসভার সদস্যপদ বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁর কদর্য মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন কবি শঙ্খ ঘোষ, চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদার, সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন, বাণী বসু, চলচ্চিত্রতারকা অপর্ণা সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, সংগীতশিল্পী কবীর সুমন, শিল্পী ও লোকসভার সদস্য বাবুল সুপ্রিয় প্রমুখ। নবনীতা দেবসেন বলেন, তাপস পালকে হয় কারাগারে, নয়তো পাগলাগারদে রাখা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.