ম্যারাডোনা পেরেছেন, মেসি পারবেন?

১৯৮৬ বিশ্বকাপের সবটুকু আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন এক মহানায়ক—ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এরপর পার হয়ে গেছে ২৮টি বছর। ওই ম্যারাডোনাই শেষ। এরপর আর কোনো মহানায়কের আবির্ভাব হয়নি, যিনি শিরোপার আনন্দে ভাসিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। তবে এবার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের একজন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ছিয়াশির বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে—তিনি লিওনেল মেসি। যদিও এটি তাঁর তৃতীয় বিশ্বকাপ। তবে পেছনোর দুটোর তুলনায় এবার বিশ্বকাপে মেসি দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অনেকটা ম্যারাডোনার মতোই।
কিন্তু ম্যারাডোনার মতো কীর্তি গড়তে মেসিকে পাড়ি দিতে হবে তিনটি বিরাট বাধা। আপাত বাধার নাম বেলজিয়াম। প্রতিপক্ষের নামটি অবশ্য আর্জেন্টিনার কাছে নতুন নয়। ছিয়াশির বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে এই বেলজিয়াম-বাধা একাই জয় করেছিলেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনা কিংবদন্তির জোড়া গোলেই সেবার ফাইনালে পা রেখেছিল নীল-সাদারা। ২৫ জুন, ১৯৮৬ থেকে ৫ জুলাই ২০১৪—সময়ের দুটো প্রান্তে কত মিল! বিশ্বকাপ নকআউট পর্বে আবারও মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম। এবার মেসি কি পারবেন ম্যারাডোনার মতো বেলজিয়াম-বাধা উতরে যেতে? এ উত্তর জানতে আরও এক দিনের অপেক্ষা। তবে বেলজিয়ামের ম্যাচের আগে ছিয়াশির ম্যারাডোনা এবং ২০১৪-এর মেসির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য খুঁজে দেখা যেতে পারে।
* মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা করেছিলেন পাঁচ গোল, করিয়েছিলেন পাঁচটি। টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার ১৪ গোলের ১০টিতেই প্রত্যক্ষ অবদান ছিল ম্যারাডোনার। ২০১৪ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের আগ পর্যন্ত মেসি করেছেন চার গোল। আর্জেন্টিনার সাত গোলের ছয়টিতেই মেসির প্রত্যক্ষ অবদান।
* দুজনের উচ্চতা কাছাকাছি। ম্যারাডোনা—৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। মেসি—৫ ফুট ৭ ইঞ্চি।
* দুজনই বাঁ-পায়ে জাদু দেখাতে সিদ্ধহস্ত। অবশ্যই দুজনের জার্সি নম্বর ১০।
* ম্যারাডোনা-মেসি—দুজনের প্রথম বড় শিরোপা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ।
* কাকতালীয় হলে সত্য, দুজনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হাঙ্গেরির বিপক্ষে।
* ছিয়াশির বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা, ২০১৪ বিশ্বকাপে মেসি।
* মেক্সিকো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কোচ কার্লোস বিলার্দোর রণ-পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন ম্যারাডোনাকে ঘিরে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে আলেসান্দ্রো সাবেলার রণ-পরিকল্পনা মেসিকে ঘিরে।
* ১৯৮২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম। সে ম্যাচে বেলজিয়ামের কিংবদন্তি গোলরক্ষক জাঁ মারি ফাফকে পরাস্ত করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তবে ওই ম্যাচের একটি স্মরণীয় ছবি আজও দেখা মেলে—ম্যারাডোনাকে ঘিরে ধরেছেন ছয় বেলজিয়ান ডিফেন্ডার। ঠিক চার বছর পর, মেক্সিকো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কী নির্মম প্রতিশোধ! ফাফকে দুই-দুইবার পরাস্ত করে বেলজিয়ামের জালে বল জড়িয়ে দিলেন ম্যারাডোনা। আর এ ম্যাচটি হয়েছিল আয়োজক দেশের রাজধানীতে অবস্থিত আজতেকা স্টেডিয়ামে। সর্বশেষ দুটি মৌসুমে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তথা এ সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে একবারও পরাস্ত করতে পারেননি মেসি। ছিয়াশি বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা যেভাবে ফাফকে হারিয়েছিলেন, আগামীকাল ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে (আয়োজক দেশের রাজধানীতে অবস্থিত) মেসি পারবেন কোর্তোয়াকে হারাতে?
২৮ বছরের এ দীর্ঘ সময়ের এক প্রান্তে সাফল্যের গল্প। আরেক প্রান্ত এখনো অপূর্ণ। সব অপূর্ণতা এবার পূরণ করতে পারবেন মেসি?

No comments

Powered by Blogger.