‘কুকুর তত্ত্ব’ by শিমুল এলাহী

‘কানাকে কানা আর খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’ ছোটবেলায় এরূপ উপদেশমূলক বচন পাঠ করলেও সাংবাদিকতার পাঠ হয়তো একটু ভিন্ন। এখানে গডফাদারকে গডফাদার হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে, শীতলক্ষ্যা নদীতে সাতটি লাশ ভেসে উঠলে তার পেছনে জড়িত খলনায়কদের খুনিই বলা হবে, সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতাকে সন্ত্রাসীই বলা হবে। কিন্তু এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে গিয়ে দেশের একজন আইনপ্রণেতার কাছ থেকে যখন ‘কুকুর তত্ত্ব’ পেতে হবে, তা ভীষণ নিন্দনীয়। নারায়ণগঞ্জের ওই বিতর্কিত সাংসদ বলেছেন, ‘সাংবাদিকেরা হচ্ছে কুকুর। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন পাড়ার অনেকে পয়সা হলে বাড়িতে কুকুর পুষত। ওদের বাড়ির সামনে গেলে কুকুরগুলো মুখ ভেংচাত। এরপর যাদের আরও পয়সা হলো, তারা মিডিয়া পোষা শুরু করল। এগুলো হলো অ্যালসেশিয়ান কুকুর। প্রশিক্ষিত। লাত্থি দিলেও এগুলো কামড়াতে আসে।’ ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে সাংবাদিক নামক গোটা পেশাজীবী সমাজের প্রতি এরূপ মানহানিকর বক্তব্য হীন মানসিকতারই প্রকাশ।
কুকুর অন্যান্য প্রাণীর মতো জগতে বিচরণ করলেও বাংলা ভাষায় মানুষকে ওই প্রাণীটির সঙ্গে তুলনা করা হয় গালি হিসেবে। ইতরবাচক একটি শব্দ একজন সাংসদের মুখের প্রকাশ্য বাণীতে পরিণত হওয়া গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য অশুভ ইঙ্গিত। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই কুরুচিকর ‘কুকুর তত্ত্বের’ আবিষ্কারকের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে যখন মহান জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেওয়া হয়। কার কাছে তাহলে বিচার চাইবে জনগণ। ইতিপূর্বে বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে যারা গলা ফাটিয়েছে, তারাই পরে বাংলা ভাইকে ধরার কৃতিত্ব নিতে ছুটে বেড়িয়েছে। তবে সত্য একদিন উন্মোচিত হবেই। ‘কুকুর তত্ত্বের’ প্রযোজ্যতাও বুমেরাং হতে পারে। পয়সাওয়ালারা যেমন মিডিয়া পোষে, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেও গডফাদারও পোষে। যারা পোষ মানে তারাই প্রকৃতপক্ষে হয়তো কুকুর হয়ে যায়। এ জন্য জনগণ হয়তো গালি না দিলেও বলতে পারে—‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়।’
শিমুল এলাহী,
ঢাকা shimul.elahi@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.