চল চল নদী দখল করি!- জেলা প্রশাসন ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের খুঁটির কেরামতি

এমনিতেই প্রভাবশালী মহল নদ-নদী দখলে সিদ্ধহস্ত। সেখানে তুরাগ নদের সীমানা চিহ্নিত করতে গিয়ে জেলা প্রশাসন ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তর এমনভাবে খুঁটি বসিয়েছে যে দখলকারী মহলের এখন পোয়াবারো। তারা যেন বলছে, ‘চল চল নদী দখল করি’! সিএস ও আরএস জরিপ অনুসারে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও খুঁটি বসানোর জন্য হাইকোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনা মানলে নদের ঢালের ১৫০ ফুট দূরে সীমানা খুঁটি বসানোর কথা।
কিন্তু বাস্তবে সরকারি খুঁটিগুলো বসিয়ে কোনো কোনো স্থানে তুরাগ নদকে ১০০ ফুটেরও কম প্রশস্ত দেখানো হয়েছে। যে এলাকায় নদের প্রস্থ ২০০ ফুটেরও কম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সালেও নদটি ছিল ৪০০ থেকে ৬০০ ফুট চওড়া। সম্প্রতি কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই নদের অনেক এলাকার খুঁটি ভেসে গেছে।
এ অবস্থায় কি নদ দখলকারীরা বসে থাকবে? নদের দুই পাড় দখল করে বালুমহাল, ইটভাটা, হোটেলসহ নানা কিছু স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। কেউ নদের পাড় দখল করে অবৈধভাবে ভাড়া দিচ্ছে। কেউ বলছে বাপ-দাদার ভিটা।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই দুঃসময়ে নদ-নদী রক্ষা করতে না পারলে এ দেশের মাটি ও মানুষকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। নদীর পাড় দখলমুক্ত করা, জলাশয় রক্ষা ও জলাধার ভরাট রোধ করার জন্য সরকার অনেক আইন করেছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই আবার নতুন করে দখল শুরু হয়ে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) এক হিসাব অনুযায়ী খুঁটি বসানোর সময় ভুলের কারণে পাঁচ কোটি বর্গফুটেরও বেশি জায়গা নদের বাইরে চলে গেছে। এটা কি ভুল না কোনো কারসাজি, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। কারও গাফিলতি থাকলে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ভুল হলে সংশোধন করতে হবে। কিন্তু নদের পাড় সরু করে তুরাগ নদকে মারা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.