বিএনপি-জামায়াত নামের বিষবৃক্ষ আপনারাই সৃষ্টি করেছেন- এরশাদ

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলে দেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে বাধাগ্রস্ত করে বিএনপি-জামায়াতকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত নামের ওই বিষবৃক্ষ আপনারাই সৃষ্টি করেছেন- যা আজ দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। গতকাল সংসদে বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। রীতি অনুযায়ী সংসদের সমাপনী দিনে বক্তব্য রাখেন বিরোধীদলীয় নেতা। এবার ব্যতিক্রম হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ওমরা করতে সৌদি আরবে থাকায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচন করে এসেছি। তবে অনেক প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাচন করতে হয়েছে। যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেতাম, তাহলে ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। আমরা আর আপনারা মিলে সরকার গঠন করতাম। সুযোগ আমরা হারিয়ে ফেলেছি, আমার দোষে না, আমাদের দোষে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অবিচার হয়েছে তা আমি ভুলতে পারি না। ১৫ দল আর ৭ দল মিলে আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলো। তারা দাবি করলো, আপনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দিন, নির্বাচনে আসুন। আমি এ শর্তে ক্ষমতা ছেড়ে দিলাম। তিনি বলেন, ’৯১ এর নির্বাচনে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলাম না। মনোনয়নপত্র ট্রাকে করে পাঠিয়েছিলাম। আমরা ৩৫টি আসনে জয়লাভ করলাম। ১৭টি আসনে খুবই কম ভোটের ব্যবধানে হারলাম। আমরা মাত্র ৫টি সিট বেশি পেলে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারতো না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নির্বাচনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, আমরা ধ্বংসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা গাড়ি ভাঙচুর-অবরোধ করি না। আজ সরকারের ভুল ধরিয়ে সঠিকভাবে কাজ করানোর চেষ্টা করছি। আমরা ছায়া সরকার হিসেবে কাজ করছি। এটা কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয়, এটা কি গণতান্ত্রিক আচরণ নয়? বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সমালোচনার প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার কেউ কেউ আমাদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। আমাদের নিয়ে হাসেন। আমি বলবো, আমাদের নিয়ে হাসবেন না। আমাদের নিয়ে হাসলে গণতন্ত্র নিয়ে বিদ্রূপ করা হবে। আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, তারাও বিরোধী দলে ছিলেন। আপনারা কি সেদিন সঠিকভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন? তিনি বলেন, বারবার সংসদ বর্জন। ফাইল ছিঁড়ে ফেলা, ক্যামেরা ভেঙে ফেলা, কটূক্তি করা, এগুলো কি গণতান্ত্রিক আচরণ ছিল? তিনি আরও বলেন, অতীতের খারাপ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন না। আসুন অতীতকে আমরা কবর দিই। সবাই মিলে সত্যিকার গণতান্ত্রিক যাত্রায় অগ্রসর হই। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি পুরোপুরি হয়নি অভিযোগ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, দেশে এখনও নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের মতো ঘটনা ঘটে। সব চেয়ে দুঃখের বিষয়- ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষ আশা করে, এসব ঘটনার কোন প্রতিকার হবে, বিচার হবে, শাস্তি হবে। কিন্তু কোন প্রতিকার হয় না। তাই মানুষের মনে আশঙ্কা দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে। সুশাসন থাকলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ঘুষ ও দুর্নীতি হতে পারে না। তিনি বলেন, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনি চলে যাওয়ার পর আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী হবেন না। তাই আমি বলবো- এসব আপনি কঠোর হস্তে দমন করুন। আপনি দেখিয়ে দিন আপনার পিতার স্বপ্ন পূরণ করছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী হোক, আর উচ্চ আকাঙক্ষার হোক, যদি এ বাজেট আপনি বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে আপনাকে মাথায় করে রাখবো। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দরকার সহায়ক পরিবেশ। আমরা দেখেছি কিভাবে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, গাছ কাটা হয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, রেলের পাত তুলে ফেলা হয়েছে। এটা সহায়ক পরিবেশ নয়। হয়তো এই পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে আবার সেই পরিবেশ সৃষ্টি হলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

বিচার বিভাগের সমালোচনা করে এইচ এম এরশাদ বলেন, বিচার বিভাগের দলীয়করণ করা হয়েছে। যে কারণে সুবিচার পাওয়া যায় না। যে কারণে তারেক রহমানের মামলার বিচারক রায় দিয়ে মালেশিয়ায় চলে গেছেন। তিনি টাকা পাচার করেছেন কিনা, করলে কত টাকা পাচার করলেন তা জানতে পারলাম না। তাই বিচারক নিয়োগ দেয়ার আগে একটু ভাবতে হবে। এমন বিচারক আমাদের জন্য কলঙ্ক। কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর ২৮ লাখ ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়। তাদের চাকরি দিতে পারি না। এসব বেকার শিক্ষিত যুবক সমাজের বোঝা। এক সময় তারা বিপথে চালিত হবে। মাদকের আশ্রয় গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.