প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করবেন কি? by সেখ সোহেল রানা

প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে কেন? এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমরা কেউ বলছি না যে, আমরা আসলে একুশ শতকের প্রযুক্তির কাছে হেরে গেছি। হ্যাকাররা হ্যাক করেছে। তারপর তারা সেই ইনফরমেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবখানে। প্রযুক্তির দিক থেকে তারা  আমাদের থেকে স্মার্ট। আমরা আরও স্মার্টনেস আর দক্ষতা দিয়ে তাদের মোকাবিলা করতে পারিনি। পৃথিবীর দেশে দেশে গড়ে উঠেছে মাল্টিলেভেল সিকিউরিটি সিসটেম বা এমএলএসএস। সেই সিস্টেম ডিজাইনের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সেখানে কাজ করছে প্রযুক্তিবিদ, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, মনস্তত্ত্ববিদদের সমন্বিত বিশেষজ্ঞ দল। আর আমরা সেই মান্ধাতা আমলের ধ্যান-ধারণা নিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডাটাগুলো রক্ষায় পাহারা বসিয়েছি। এটা অসম্ভব। যারা ডাটা চুরি করছে তারা প্রযুক্তির যে রণসজ্জায় সজ্জিত আমাদের তার চেয়েও বেশি প্রযুক্তির উৎকর্ষ অর্জন করতে হবে। তবেই আমরা তাদের মোকাবিলা করতে পারবো।
একটি পাবলিক পরীক্ষার সর্বপ্রথম ধাপ প্রশ্নপত্র তৈরি করা। ধরে নিই, প্রতিটি বিষয়ের জন্য ৫০ জন প্যানেল শিক্ষকের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র আহ্বান করা হলো। তারা প্রশ্নপত্রের একটি করে সফট কপি একটি বিশেষ ফরম্যাটে (ধরে নিই .ীষং) আপলোড করলেন একটি শক্তিশালী সফটওয়্যার অ্যাপলিকেশনে। এই সফটওয়্যারটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ৫০ সেট প্রশ্নপত্র থেকে  কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি ধরনের প্রশ্নপত্র তৈরি করতে সক্ষম। এই প্রশ্নপত্রগুলো Decode করে বিশেষ ধরনের  Binary Signal-এ রূপান্তরিত করা হবে এবং বহুস্তরবিশিষ্ট বিশেষ একটি ডাটাবেজ সিকিউরিটি সিস্টেমে সংরক্ষিত করা হবে। ছাপানোর কয়েক সেকেন্ড আগে তথ্যগুলো Encode  করা হবে।
প্লেট সিস্টেমের ছাপাপদ্ধতি বাতিল করে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। মানুষের পরিবর্তে পুরো ছাপার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে Microprocessor নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি Robotics বা Automated Machine । রোবটগুলোর মধ্যে Artificial Intellegence Program Integrated থাকবে না। শুধুমাত্র একটি বা দু’টি কাজের নির্দেশিত প্রোগ্রাম সন্নিবেশিত থাকায় এগুলো তৈরির খরচ হবে অত্যন্ত কম।
প্রিন্টিং মেশিনটি একটি কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।  ছাপার পরে কাটিং, প্যাকিং, সিকিউরিটি সিল- সবই একটি Automated Control System-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। একটি বিশেষ secured রুমের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে- যেখানে থাকবে শুধুই রোবট অথবা Automated Machine। তাই তথ্য চুরির কোন আশঙ্কা থাকবে না। সিস্টেমেটিং সমস্যা হলে বাইরে থেকে Auto detection & Rescue পদ্ধতির মাধ্যমে Remote Solution দেয়া হবে। থাকবে সিসি ক্যামেরা এবং Access card এর ব্যবহারও।
সিকিউরিটি সিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলোspecification। অর্থাৎ যারা এইচএসসি’র প্রশ্নপত্র ছাপার সঙ্গে জড়িত তারা শুধু এই পরীক্ষার ছাপার কাজই করবে, অন্য কোন পরীক্ষার কাজ তারা করবে না। তাতে সিকিউরিটি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ছাপার ক্ষেত্রে wastage কপিগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৎক্ষণাৎ damping করে ফেলতে হবে। টেস্ট প্রিন্টিং হবে Decoding Language-এ। সিকিউরিটিজ সিস্টেম ডিজাইনে আরও টারমিনাল লেয়ার যোগ করা যেতে পারে।  যেমন, যারা প্রিন্টিং রুমে কোর ডাটা নিয়ে কাজ করবে তাদেরকে একটি বিশেষ ধরনের লেন্সযুক্ত চশমা পরতে হবে যেটি প্রশ্নপত্রের ফন্টগুলোকে রূপান্তরিত এবং বিকৃতভাবে উপস্থাপন করবে।
যারা কোর প্রিন্টিং রুমে কাজ করবেন তারা কর্মস্থল ত্যাগ করার পূর্বমুহূর্তে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের একটি কম্পিউটার গেইম খেলবেন। সিকিউরিটি ব্যবস্থার এই ধাপটি বেশ কার্যকর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এই বিশেষ ধরনের কম্পিউটার গেইম মস্তিষ্কের মধ্যে সদ্য প্রবেশকৃত তথ্যের শতকরা ৯০-৯৯ ভাগ মুছে ফেলতে সক্ষম। সিকিউরিটির পরের ধাপে রয়েছে প্রেসে নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানো। তাছাড়া, বিজি প্রেসে কর্মরত ব্যক্তিদের  মোবাইল ও কমিউনিকেশন সিস্টেম যেমন মোবাইলের ওগঊ ট্র্যাকিং, ডাটা ট্র্যাকিং, গ্লোবাল পজিশনিং ইত্যাদি অটো-মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় আনা যেতে পারে।
সিকিউরিটির সর্বশেষ স্তরে রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইলে অটো স্ক্রিনিং বা ফিল্টারিং-এর ব্যবস্থা করা। ফেসবুক, টুইটারসহ বাংলাদেশে যত ইন্টারনেট পেজ লোড হচ্ছে; ইমেইলে, মোবাইলে যত তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে সেগুলো ফিল্টার করে, আইপি অ্যাড্রেস ডিটেক্ট করে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করা সম্ভব। ‘অপরাধী কম্পিউটার’কে ইন্টারনেট দুনিয়া থেকে স্থায়ীভাবে disable করে দেয়া সম্ভব। কারণ ওই কম্পিউটার পরবর্তীতে আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তন করলেও মাদারবোর্ডের কিছু unique  তথ্য থাকে যেটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
filtering tag ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটরগুলো অপরাধী মোবাইল সেটের IME detect  করে সেগুলো মোবাইল নেটওয়ার্কে স্থায়ীভাবে disable করে দিতে পারে। এই ধরনের আর্থিক ক্ষতি অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনের উৎসাহ কমিয়ে দিতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাল্টিলেয়ার সিকিউরিটি সিস্টেম গড়ে তোলার সময় এসেছে। প্রয়োজন ডাটা সিকিউরিটি গবেষণা কেন্দ্র। এটি অপরিহার্য এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারও বটে।  আমরা যেন একটা মেধাবী প্রজন্ম সৃষ্টি করে যেতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.