নির্মম রিকুইজিশন by কাজী সোহাগ

রাত ৮টা ৩০ মিনিট। শতাধিক যাত্রী নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ওয়ান লাইন পরিবহনের গাড়িটি যাচ্ছিল বাড্ডার নতুনবাজারে। মহাখালীর রেলগেট পার গতেই গাড়িটি থেমে গেলো। প্রথম ৫ মিনিট যাত্রীরা কিছ্ইু বুঝলেন না। তাদের ধারণা আরও যাত্রী নিতেই হয়তো থেমে থাকা। কারন গাড়ির ইঞ্জিন ছিলো সচল। তবে চালকের আসন ছিলো ফাঁকা। গরমে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরা ততক্ষণে তেতে উঠেছেন। চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার সবাই লাপাত্তা। আশেপাশে কোন ট্রাফিক সার্জেন্টও নেই। কয়েক যাত্রী বিকল্প গাড়ি পেয়ে তাতে উঠে পড়েন। কিন্তু গাড়ির ভেতরে প্রথম সারিতে থাকা কয়েকটি আসনে ছিলেন নারী ও শিশু। অনেক যাত্রী নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে বেশি টাকা দিয়েছেন সুপারভাইজারকে। ভাংতি করে পরে বাকি টাকা ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু সুপারভাইজারকে না পেয়ে তারাও গাড়ি থেকে নামতে পারছিলেন না। এরইমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১০ মিনিট। যাত্রীদের রাগের পারদ তখন তুঙ্গে। তাদের অশ্লীল গালি থেকে তখন রেহাই পাননি গাড়ির কর্মচারি থেকে শুরু করে ট্রাফিক পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও। এরইমধ্যে কয়েক বেপরোয়া যাত্রী গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গার সুর তোলেন। কিছুক্ষণ পরই বিকট শব্দে কয়েকটি কাঁচ ভেঙ্গে ফেলা হলো। আতংক আর ভয়ে গাড়িতে থাকা নারী ও শিশুরা চিৎকার করে উঠলেন। তড়িঘড়ি বাস থেকে বের হতে গিয়ে আহত হলেন। কয়েক যাত্রী এর প্রতিবাদ করলেন। তাদের যুক্তি গাড়ির তো কোন দোষ নেই। সব দোষ পুলিশের। তারা চালক ও অপর দুই কর্মচারিকে নিয়ে গেছে। হয়তো ঘুষের টাকা নিয়ে দেন দরবার চলছে। চাহিদামতো টাকা পেলেই পুলিশ গাড়িটি ছেড়ে দেবে। ২০ মিনিট পার হলেও কারও দেখা নেই। শেষ পর্যন্ত গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গার উৎসবে মাতেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। সামনে,পেছনের গ্লাসসহ গাড়ির দুপাশের প্রায় ১০টি গ্লাস ভেঙ্গে ফেলা হলো। বিষয়টির খোঁজ নিতে মহাখালির ট্রাফিক বক্সে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই এগিয়ে এলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট রমজান। তাকে পুরো ঘটনা বলার পর জানালেন, ভাই সরকারি চাকরি করি। গাড়িটি রিকুইজিশন করা হয়েছে। আমিই করেছি। যাত্রীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত বলে জানান। বললেন, আমি সব জানি। ওই অবস্থায় যদি আমি ওখানে উপস্থিত থাকি তাহলে পাবলিক তো আমাকেও মারবে। তবে গাড়ির ক্ষতির বিষয়ে উদাসীন ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট। এমনকি শতাধিক যাত্রীর হয়রানি নিয়েও। এ বিষয়ে ওয়ান লাইন পরিবহনের মালিক ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা পুলিশের নির্মম রিকুইজিশনের শিকার। আমার আরও দুটি গাড়ি তারা রিকুইজিশন করে রেখেছে। ভাংচুরের কারনে গাড়ির এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.