খালেদা জিয়ার পুলিশ প্রটেকশন বহাল আছে

বিরোধীদলীয় নেতার পদ হারালেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। 'রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' বিবেচনায় তার পুলিশ প্রটেকশন ও প্রটোকল বহাল রাখা হয়েছে। তার বাসায় এবং চলাচলের সময়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে মাঝেমধ্যে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো বা কমানো হয়। সমকালের পক্ষ থেকে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সংখ্যা কমানো হয়েছে। এ কারণে তারা নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য চেয়ে সংস্থাটির সদর দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবীর সমকালকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতোই রয়েছে। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার বাসায় ১৪ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। বরাবর এই সংখ্যক পুলিশ সদস্যই সেখানে মোতায়েন ছিল। তবে মাঝে বিএনপি নেত্রীর নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় তার বাসার সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সময়মতো আবার তা সরিয়েও নেওয়া হয়।
পুলিশের প্রটোকল অ্যান্ড প্রটেকশন শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার পদে না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তার প্রটেকশন বা প্রটোকল প্রত্যাহার করা হয়নি। তার বাসভবনের নিরাপত্তায় সেখানে আবাসিকভাবে পুলিশ সদস্যদের রাখা হয়েছে। পাশাপাশি তার চলাচলের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও প্রটোকল রয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে বর্তমানে পুলিশের কতজন সদস্য রয়েছেন_ জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, এটা বিভিন্ন সময়ে কমবেশি হয়ে থাকে। নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি বিশ্লেষণ করে কখনও তা কমানো, আবার কখনও বাড়ানো হয়। তবে নিরাপত্তার স্বার্থেই সংখ্যাটি প্রকাশ না করা ভালো।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ সমকালকে বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগে ২৪ জন পুলিশ সার্বক্ষণিক বাসার সামনে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ১২ জন পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া খালেদা জিয়া বাসা থেকে কোথায়ও গেলে তার গাড়িবহরের সঙ্গে আগে দায়িত্ব পালন করত ১৬ জন পুলিশের একটি দল। বর্তমানে তা অর্ধেক করে আটজনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলের উদ্যোগে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আনসার সদর দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কবে নাগাদ আনসার দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি।
লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ বাহিনীতে নতুন সদস্য নেওয়া হবে। এর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমানে চেয়ারপারসনের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যসংখ্যা ২৫ জন। সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সৈনিকের সমন্বয়ে এই নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনের সামনের দিকে কয়েকটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বিএনপি সূত্র জানায়, এর কয়েকটি পুলিশের উদ্যোগে বসানো হলেও কিছু লাগানো হয়েছে দলীয় তত্ত্বাবধানে। দলীয় প্রধানের নিরাপত্তা জোরদারের জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। গত ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়। এর আগে থেকেই তার বাসার সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনার পর তাকে 'অবরুদ্ধ' করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপি। তবে এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা তার সঙ্গে বৈঠক করেন। নির্বাচনের পর বাড়তি পুলিশ, জলকামান, বালুর ট্রাক ইত্যাদি সরিয়ে নেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.