অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সমঝোতার তাগিদ

বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমঝোতায় পেঁৗছানোর জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশ নিয়ে এক নির্ধারিত বিতর্কে এমপিরা এ তাগিদ দেন। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সহিংসতায় তারা গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তারা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি জামায়াতকে সঙ্গে না রাখারও তাগিদ দেন। হাউস অব কমন্সের নিয়মিত অধিবেশনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়। আলোচনায় ১২ জন এমপি অংশ নেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছে। দেশের স্বার্থে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চালিয়ে যাওয়া উচিত। তারা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটিকে খাদের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে।
সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ বিষয়ক ব্রিটিশ অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান এন মেইন বলেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। দুই বছর প্রধান দুটি দলের নেতাদের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন বা দেশের বাইরে নির্বাসনে কাটাতে হয়। কিন্তু মনে হচ্ছে, তারা সেই দুরবস্থা থেকে কোনো শিক্ষা নেননি। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশটিতে গণতন্ত্র টেকসই করতে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া আর্থিক সহযোগিতা কোনো কাজে আসেনি। অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্রিটিশ সরকারের বারবার সংলাপের অনুরোধে রাজনৈতিক নেতারা কর্ণপাত করেননি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ বর্তমান সংঘাতের অন্যতম কারণ কি-না_ কনজারভেটিভ পার্টির এমপি রেহমান চিশতির এমন প্রশ্নের জবাবে এন মেইন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ২০০৬ সালে তৎকালীন বিরোধী দল (বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে এন মেইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন লেবার পার্টির এমপি জেরেমি করবি। জবাবে এন মেইন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমপিরা বলেন, বাংলাদেশ ক্রমেই গণতন্ত্রের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব ঘটেনি মন্তব্য করে তারা বলেন, এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা করে অবিলম্বে তা বন্ধে দুই প্রধান দলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডেভিড লিডিংটন বাংলাদেশে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের মতামত স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রয়েছে। এমপিরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং র‌্যাবের ভূমিকারও সমালোচনা করেন। র‌্যাবকে 'ঘাতক বাহিনী' অভিহিত করে তারা বিভিন্ন গুম ও খুনের ঘটনার জন্য র‌্যাবকে দায়ী করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলি রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ যথাযথ ছিল বলে মন্তব্য করলেও অনেকেই রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করেন। তাদের অনেকেই এ বিচার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এবং মৃত্যুদ ের বিরোধিতা করেন। তারা অবশ্য বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সাক্ষী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানান। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হলে তা দেশটিতে গোপন উগ্রপন্থার উত্থান ঘটাবে কি-না_ এমন প্রশ্ন করেন রেহমান চিশতি এমপি। জবাবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পপলার এলাকার এমপি জিম ফিটজপ্যাট্রিক বলেন, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সব দলের উচিত হবে, জামায়াতকে সঙ্গে না রাখা।

No comments

Powered by Blogger.