অপেক্ষায় বাংলাদেশ

(মঙ্গলে যাওয়ার মার্স ওয়ান মিশনে ৪০ জনের একজন হওয়ার সম্ভাবনার দ্বারে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের দু'জন নারী। এভাবেই তারা মঙ্গলে নামবেন। ঊষরভূমিতে গড়ে তুলবেন দ্বিতীয় পৃথিবী) ২০২৩ সালে মহাকাশে উপনিবেশ স্থাপনের ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান ঘোষণা দেয় গত বছর। ঘোষণার পাঁচ মাসের মধ্যেই মার্স ওয়ান মিশনে যেতে ১৪০টি দেশের দুই লক্ষাধিক আবেদনপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ১৮ বাংলাদেশিও ছিলেন। সম্প্রতি দ্বিতীয় রাউন্ডে মাত্র ১০৫৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের দু'জন নারীও আছেন। লিখেছেন যোয়েল কর্মকার মহাকাশই হবে আমাদের পরবর্তী ঠিকানা, আগামীর সীমান্ত। এমন সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন দেখা এতদিন কল্পবিজ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান ২০২৩ সাল থেকে মঙ্গল গ্রহে মনুষ্য বসতি স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনার সূচনা করে ইতিমধ্যে সব মহলের নজর কেড়েছে। আক্ষরিক অর্থে এই অভিযান মানব ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হলেও মানুষের অদম্য অভিযাত্রার নেশা কোনোভাবেই এ অগস্ত্য যাত্রাকে রোধ করতে পারেনি, বরং আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম ঘোষণার পাঁচ মাসের মধ্যেই মার্স ওয়ান মিশনের জন্য ১৪০টি দেশের ২ লাখ ২ হাজার ৫৮৬টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এই অন্তিম যাত্রার জন্য আবেদন করেছিলেন ১৮ জন বাংলাদেশিও। প্রথম রাউন্ডের প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে যায় ২০১৩ এর ৩১ আগস্ট।
সম্প্রতি এই আবেদনকারীর মধ্য থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য মাত্র ১ হাজার ৫৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকেই পরবর্তী যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে মঙ্গল গ্রহ অভিযাত্রীদের চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখপ্রদ সংবাদ হলো, এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন দুই বাংলাদেশিও। তারা হলেন_ সালমা মেহের ঐশী (২৭) ও ডা. শারমিন জাহান (২৫)। মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই নির্বাচিত প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এক অভিনন্দন বার্তায় তাদের এই কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই চিকিৎসকের কাছ থেকে সুস্বাস্থ্যের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রার্থীদের নির্বাচন কমিটির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং এর মধ্য দিয়েই পরবর্তী রাউন্ডের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে। তবে বাছাইয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এ কার্যক্রম ও প্রকল্পের জন্য যথাসাধ্য প্রচারণার দক্ষতাকেও বিবেচনায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত প্রার্থীদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে এ বিষয়ে সহায়তা নিতে বলা হয়েছে, কারণ বিপদসংকুল এ মহাকাশ অভিযাত্রায় প্রিয়জনদের কাছে কখনও ফিরে আসা সম্ভব হবে না, এ যাত্রা হবে শুধুই একমুখী।
সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি দুই সৌভাগ্যবতী প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তাদের অনুভূতি জানাতে গিয়ে উচ্ছ্্বসিত হয়ে পড়েন, এ যেন হঠাৎ নাগাল পাওয়া ঘোরলাগা স্বপ্নের বাস্তবচিত্র। আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সালমা মেহের ঐশী মার্স ওয়ান মিশনে অংশ নেওয়ার পেছনে তার মতামত জানিয়ে বলেন, 'স্কুলজীবনে যখন থেকে আমি মহাকাশ নিয়ে নানারকম পড়াশোনা করতে শুরু করেছি তখন থেকেই একটা সুখস্বপ্ন ছিল মহাকাশচারী হওয়ার। ভারতের নারী মহাকাশচারী কল্পনা চাওলাকে নিজের আদর্শ ভাবতে ভালো লাগত। সায়েন্স ফিকশনের বই, মহাকাশ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন পড়া আমার প্রিয় বিষয়। মার্স মিশন আমার সেই সুখস্বপ্ন পূরণের একটা বড় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে অংশ নিতে পারার সুযোগ পাওয়াই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। প্রতিকূল পরিবেশে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য যে মানসিক শক্তির প্রয়োজন তা আমার আছে। সুযোগ পেলে আর প্রশিক্ষণ পেলে নিজেকে মার্স মিশনের জন্য যোগ্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নিঃসন্দেহে মার্স মিশন মানব সভ্যতার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসের একটা মাইলফলক। আজ হোক কাল হোক, মানুষকে হয়তো একদিন পৃথিবীর বাইরের অনন্ত নক্ষত্রবীথির দিকে পাড়ি দিতেই হবে। মার্স মিশন কতটুকু সফল হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। মানুষ অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে, আমিও মার্স মিশনের সফলতার বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।' অপর প্রার্থী শারমিন জাহান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তিনি ঢাকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা থেকেই মঙ্গল মিশনে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
২০২৩ সালে মঙ্গল গ্রহে মানুষের প্রথম পদচারণার ইতিহাস গড়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শেষ পর্যন্ত থাকবে কি-না সে বিষয়ে আগাম কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও অদম্য দুঃসাহসিকতায় আমরাও যে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জ্ঞানচর্চার পরিবেশ ও প্রযুক্তি বিকাশের পথকে সুগম করতে ত্যাগের মানসিকতা ধারণ করতে পারি তা সুনিশ্চিত।

No comments

Powered by Blogger.