লোমহর্ষক সেই পাঁচ দিন

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর দিনটি আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হয়। সন্ধ্যায় অসংখ্য মানুষ ঘরে ফিরছিলেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে হোটেলে-রেস্তোরাঁয় দেশী-বিদেশী মানুষের ভিড়। তারপর শুরু হয় সেই ভয়ংকর ঘটনা, যা ‘২৬/১১’ হিসেবে সারা ভারতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সন্ত্রাসবাদীরা গুলি চালিয়ে, বোমা ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ভয়াল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা শেষে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সেই লোমহর্ষক হামলায় সমাপ্তি ঘটে ২৯ নভেম্বর। প্রতিবছর এই দিনে রুদ্ধশ্বাস সেই পাঁচ দিনের স্মৃতিকে শোক মৌনতার মধ্য দিয়ে স্মরণ করে ভারতীয়রা। সন্ত্রাসীরা হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানুষকে পনবন্দি করে। এক ইহুদি স্থাপনার ওপর হামলা চালায়। ভারতের সংবাদমাধ্যম কোনো রাখঢাক না করেই গোটা ঘটনার খুঁটিনাটি ছবি তুলে ধরে। মৃতদেহ ও মৃতপ্রায় মানুষদেরও দেখানো হয়। সন্ত্রাসবাদী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ গড়ায় ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত নয় জন সন্ত্রাসবাদী প্রাণ হারায়। আজমল কাসাভ নামের এক পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীকে আটক করা সম্ভব হয়।
মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৬ জনে। এদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সূত্র অনুযায়ী আহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০। ভয়াবহ হামলার সেই ক্ষত, সেই রক্ত, সেই শোক পাঁচ বছর পরও মুছে যায়নি ভারতীয় নাগরিকদের মন থেকে- সন্ত্রাসবিরোধী শান্তিপ্রিয় মানুষের মন থেকে। মঙ্গলবার হোটেল তাজে হামলার শোক দিবস উপলক্ষে ফেসবুক থেকে শুরু করে সবগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে সবাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই ঘৃণা ঝেড়েছেন, কামনা করেছেন শান্তি। সবাই বলছেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ পদদলিত করে এগিয়ে যাক মানবতার বিশ্ব। মঙ্গলবার সকাল থেকেই হোটেল তাজ ও মুম্বাইয়ের অন্যান্যস্থলে হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চোখের জলে নিকটজনদের স্মরণ করেন নিহতদের স্বজনরা। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ত্রাসী আজমল কাসাভ সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়ে হোটেল তাজ ও মুম্বাইয়ের নিরীহ মানুষজনের ওপর। তিন দিন ধরে সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলি ও বোমাবাজিতে প্রাণ হারান ১৫৬ জন মানুষ। সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে নিহত হয় ১০ হামলাকারীও। এই হামলায় আহত হন আরও অন্তত ৬০০ জন। অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হয় একমাত্র জীবিত সন্ত্রাসী আজমল কাসাভ। আটক কাসাভকে গণহত্যা, নির্যাতনসহ ৮৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১০ সালের ৬ মে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর পুনের ইয়ারদা জেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় কাসাভের।

No comments

Powered by Blogger.