দলনিরপেক্ষতা প্রমাণেই সংকটের সমাধান by মোঃ আবু সালেহ সেকেন্দার
আওয়ামী
লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের বহু প্রতীক্ষিত তফসিল ঘোষিত হয়েছে। তাদের ঘরে
ঘরে এখন ঈদ উৎসবের আমেজ। নির্বাচন কমিশনের এমন করিতকর্মা উদ্যোগকে সাধুবাদ
জানিয়ে তাদের আনন্দ মিছিল আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। বিরোধী দলও বসে নেই। তারা
তফসিল ঘোষিত হওয়ার অল্প সময় পরেই তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং দেশের বিভিন্ন
স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এখন ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। এ সপ্তাহের
প্রথমদিকে হরতাল-অবরোধের কোনো চিহ্ন মাত্র ছিল না। বিদেশী অতিথির কল্যাণে
জাতি কিছুদিনের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছিল বটে। কিন্তু
ক্ষণিকের সেই শান্তি তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর এক ফুৎকারে উড়ে গেছে। জনগণের
একটু শান্তিতে দিন যাপন শুধু বিরোধী দল নয়; মনে হয়, নির্বাচন কমিশন ও
সরকারের সইছিল না! না হয়, এখনই তফসিল ঘোষণা করে বিরোধী দলের হাতে নতুন একটা
হাতিয়ার তুলে দেয়ার অর্থ কী? প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণার আগের
দিনইতো বলেছেন, তারা দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা চান। তফসিল ঘোষণার
সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। হঠাৎ এমন কী ঘটল যে, একদিন পরই তিনি তার মত পাল্টে
তফসিল ঘোষণা করলেন? সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৯ দিন আগে ভোট গ্রহণের তারিখ
ঘোষণা করলেন! দুই দলের সমঝোতার জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করলে ক্ষতি কী
ছিল? আরও সপ্তাহ খানেক পর তফসিল ঘোষণা করা যেতে পারত। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য
সংলাপের মাধ্যমে যে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার ফলাফল পাওয়ার জন্য
কয়েক দিন অপেক্ষা করলে গণতন্ত্র বা সংবিধানের অন্তত কোনো লংঘন হতো না।
তবে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। যদিও এ পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।
শেষ মুহূর্তে কাকতালীয় কিছু না ঘটলে প্রধান বিরোধী দল ছাড়াই হয়তো বর্তমান সরকারকে নির্বাচনে যেতে হতে পারে। তবে পুনঃতফসিলের সুযোগ থাকায় বর্তমান তফসিল ঘোষণা রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে হয়তো অন্তরায় হবে না। এখন নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে তাদের আন্তরিকতা, নিরপেক্ষতা ও সদিচ্ছার পরীক্ষা দিয়ে এ সংকটের সমাধান করতে হবে। সরকার এতদিন বলে এসেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারে রূপ নেবে। তফসিল ঘোষিত হয়েছে। এখন তাই সরকারের প্রতিশ্র“তি রক্ষার সময় এসেছে। সরকারকে কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে। আর এ প্রমাণ শুরু হবে বিটিভির নিরপেক্ষতা প্রমাণের মাধ্যমে। বিটিভিকে সংবাদ ও অনুষ্ঠানে সরকারের গুণগান প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিটিভির এমন নিরপেক্ষ ভূমিকাই বিরোধী দল ও জনগণের কাছে এই বার্তা দেবে যে, নির্বাচনকালীন সরকার সত্যিকার অর্থেই সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চায়।
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় নির্বাচন কমিশন নিজেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য যে আত্মঘাতী তৎপরতা চালিয়েছে তা ইতিহাসের নির্লজ্জ প্রহসন। বিএনএফের মতো একটি ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রদান নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ হয়, তা অতীতের সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। ওই নাম-সর্বস্ব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দিলে এদেশের গণতন্ত্রের কোনো আহামরি ক্ষতি হতো না। বরং ওই নিবন্ধন প্রদানের প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের নগ্ন পক্ষপাতিত্ব এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে যাই হোক, অতীতকে পেছনে ফেলে বিরোধী দলকে আস্থায় আনতে নির্বাচন কমিশনকে এখন কিছু বাস্তবধর্মী নিরপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে তফসিল প্রত্যাখ্যানকারী দলগুলো ও জনগণের কাছে প্রমাণ করার সময় এসেছে যে, তারা কোনোভাবেই ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ নয়; প্রয়োজনে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পিছপা হবে না। তাদের কাছে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগে সরকারি দল, বিরোধী দল ভেদাভেদ নেই। সরকারি দলকে বাড়তি সুবিধা দেয়া আচরণবিধির এমন কয়েকটি ধারাকে প্রয়োজনবোধে সংশোধন করা যেতে পারে।
নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বও কম নয়। তারা এতদিন ছিল দলীয় সরকার। তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর তারা অন্তর্বর্তী সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারে রূপ নিয়েছে। তবে শুধু কাগজে-কলমে নির্বাচনকালীন সরকার হলে চলবে না। এ সরকারকে তাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, কাজকর্মে তার প্রমাণ দিতে হবে। পুলিশ ও আইন-শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য এবং প্রশাসনকে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা কোনো বিশেষ দলের প্রতি অনুগত নয়। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি সমান আচরণ করবে। বিরোধী দলের মিছিলে লাঠিপেটা, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং সরকারি দলের মিছিলে নিরাপত্তা প্রদানের যে রেওয়াজ তারা এতদিন চর্চা করেছে তা পরিত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য দলীয় লোক যতটা না অন্তরায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় দলবাজ বা দলকানারা। ওইসব ব্যক্তি নিজেদের শতভাগ দলীয় লোক প্রমাণ করতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করে যা সামগ্রিক নির্বাচনী পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই নির্বাচনকালীন সরকারকে এখনই ওইসব দলকানাকে প্রশাসন, পুলিশ বা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা বাঞ্ছনীয়।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের হর্তাকর্তাদের বহুবার আমরা বলতে শুনেছি, এখন মিডিয়া এত শক্তিশালী যে, কোনোভাবেই নির্বাচনে কারচুপি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে দেখেছি সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপকর্মের ফিরিস্তি সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশনের জেরে বহু সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছে। বিগত সময়ে ওইসব সাংবাদিক নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশা করি।
জেলে বন্দি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রেখে বিরোধী দল কখনও নির্বাচনে আসবে না সে কথা হলফ করে বলা যায়। এমন আশা করাও অগণতান্ত্রিক। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনাও সরকারের দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত নেতাদের ছাড়া রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার হওয়া সব বন্দিকে মুক্তি প্রদানের বিকল্প নেই। বিলবোর্ডে সরকারের সাফল্য প্রচার এ সরকারের শেষ সময়ে এসে জোরেশোরেই শুরু হয়েছিল। গত ঈদের আগে এক রাতেই ঢাকা শহরের সব বিলবোর্ড দখল হয়ে গিয়েছিল। ওই বিলবোর্ডগুলোতে শুধু সরকারের গুণকীর্তনই প্রচারিত হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এখনও মহাজোট সরকারের সাফল্যের ফিরিস্তি সংবলিত ওইসব রঙিন বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে। এতে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখনই ওই বিলবোর্ডগুলোর অপসারণ জরুরি।
গত সংসদ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের আমরা সংযম প্রদর্শন করতে দেখেছি। শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে আন্দন মিছিল করা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের এ আচার-আচরণে পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তারা প্রায় সারা দেশে আনন্দ মিছিল করেছে।
তবে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। যদিও এ পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।
শেষ মুহূর্তে কাকতালীয় কিছু না ঘটলে প্রধান বিরোধী দল ছাড়াই হয়তো বর্তমান সরকারকে নির্বাচনে যেতে হতে পারে। তবে পুনঃতফসিলের সুযোগ থাকায় বর্তমান তফসিল ঘোষণা রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে হয়তো অন্তরায় হবে না। এখন নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে তাদের আন্তরিকতা, নিরপেক্ষতা ও সদিচ্ছার পরীক্ষা দিয়ে এ সংকটের সমাধান করতে হবে। সরকার এতদিন বলে এসেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারে রূপ নেবে। তফসিল ঘোষিত হয়েছে। এখন তাই সরকারের প্রতিশ্র“তি রক্ষার সময় এসেছে। সরকারকে কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে। আর এ প্রমাণ শুরু হবে বিটিভির নিরপেক্ষতা প্রমাণের মাধ্যমে। বিটিভিকে সংবাদ ও অনুষ্ঠানে সরকারের গুণগান প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিটিভির এমন নিরপেক্ষ ভূমিকাই বিরোধী দল ও জনগণের কাছে এই বার্তা দেবে যে, নির্বাচনকালীন সরকার সত্যিকার অর্থেই সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চায়।
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় নির্বাচন কমিশন নিজেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য যে আত্মঘাতী তৎপরতা চালিয়েছে তা ইতিহাসের নির্লজ্জ প্রহসন। বিএনএফের মতো একটি ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রদান নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ হয়, তা অতীতের সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। ওই নাম-সর্বস্ব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দিলে এদেশের গণতন্ত্রের কোনো আহামরি ক্ষতি হতো না। বরং ওই নিবন্ধন প্রদানের প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের নগ্ন পক্ষপাতিত্ব এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে যাই হোক, অতীতকে পেছনে ফেলে বিরোধী দলকে আস্থায় আনতে নির্বাচন কমিশনকে এখন কিছু বাস্তবধর্মী নিরপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে তফসিল প্রত্যাখ্যানকারী দলগুলো ও জনগণের কাছে প্রমাণ করার সময় এসেছে যে, তারা কোনোভাবেই ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ নয়; প্রয়োজনে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পিছপা হবে না। তাদের কাছে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগে সরকারি দল, বিরোধী দল ভেদাভেদ নেই। সরকারি দলকে বাড়তি সুবিধা দেয়া আচরণবিধির এমন কয়েকটি ধারাকে প্রয়োজনবোধে সংশোধন করা যেতে পারে।
নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বও কম নয়। তারা এতদিন ছিল দলীয় সরকার। তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর তারা অন্তর্বর্তী সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারে রূপ নিয়েছে। তবে শুধু কাগজে-কলমে নির্বাচনকালীন সরকার হলে চলবে না। এ সরকারকে তাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, কাজকর্মে তার প্রমাণ দিতে হবে। পুলিশ ও আইন-শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য এবং প্রশাসনকে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা কোনো বিশেষ দলের প্রতি অনুগত নয়। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি সমান আচরণ করবে। বিরোধী দলের মিছিলে লাঠিপেটা, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং সরকারি দলের মিছিলে নিরাপত্তা প্রদানের যে রেওয়াজ তারা এতদিন চর্চা করেছে তা পরিত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য দলীয় লোক যতটা না অন্তরায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় দলবাজ বা দলকানারা। ওইসব ব্যক্তি নিজেদের শতভাগ দলীয় লোক প্রমাণ করতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করে যা সামগ্রিক নির্বাচনী পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই নির্বাচনকালীন সরকারকে এখনই ওইসব দলকানাকে প্রশাসন, পুলিশ বা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা বাঞ্ছনীয়।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের হর্তাকর্তাদের বহুবার আমরা বলতে শুনেছি, এখন মিডিয়া এত শক্তিশালী যে, কোনোভাবেই নির্বাচনে কারচুপি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে দেখেছি সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপকর্মের ফিরিস্তি সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশনের জেরে বহু সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছে। বিগত সময়ে ওইসব সাংবাদিক নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশা করি।
জেলে বন্দি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রেখে বিরোধী দল কখনও নির্বাচনে আসবে না সে কথা হলফ করে বলা যায়। এমন আশা করাও অগণতান্ত্রিক। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনাও সরকারের দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত নেতাদের ছাড়া রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার হওয়া সব বন্দিকে মুক্তি প্রদানের বিকল্প নেই। বিলবোর্ডে সরকারের সাফল্য প্রচার এ সরকারের শেষ সময়ে এসে জোরেশোরেই শুরু হয়েছিল। গত ঈদের আগে এক রাতেই ঢাকা শহরের সব বিলবোর্ড দখল হয়ে গিয়েছিল। ওই বিলবোর্ডগুলোতে শুধু সরকারের গুণকীর্তনই প্রচারিত হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এখনও মহাজোট সরকারের সাফল্যের ফিরিস্তি সংবলিত ওইসব রঙিন বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে। এতে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখনই ওই বিলবোর্ডগুলোর অপসারণ জরুরি।
গত সংসদ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের আমরা সংযম প্রদর্শন করতে দেখেছি। শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে আন্দন মিছিল করা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের এ আচার-আচরণে পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তারা প্রায় সারা দেশে আনন্দ মিছিল করেছে।
No comments