স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান গীতাঞ্জলির কাছেই বারবার ফিরে আসতে হবে

গীতাঞ্জলি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ বিষয়ে ৬ মে ১৯১৩ তারিখে লন্ডন থেকে রবীন্দ্রনাথ ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লিখেছিলেন, ‘গীতাঞ্জলির ইংরেজি তর্জ্জমার কথা লিখেছিস্। ওটা যে কেমন করে লিখ্লুম এবং কেমন করে লোকের এত ভাল লেগে গেল, সে কথা আমি আজ পর্যন্ত ভেবেই পেলুম না।
আমি যে ইংরেজি লিখেত পারিনে এ কথাটা এমনি সাদা যে এ সম্বন্ধে লজ্জা করবার মত অভিমানটুকুও আমার কোনোদিন ছিল না। যদি আমাকে কেউ চা খাবার নিমন্ত্রণ করে ইংরেজিতে চিঠি লিখ্ত তাহলে তার জবাব দিতে আমার ভরসা হত না...।’
গতকাল শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘ইংরেজি গীতাঞ্জলি: রচনা ও অভ্যর্থনা’ বিষয়ে স্মারক বক্তৃতা দিয়ে রবীন্দ্রনাথের লেখাটি উদ্ধৃত করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির শতবর্ষে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৃতীয় স্মারক বক্তৃতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাঙালিসমগ্র জাদুঘর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন কেয়া চৌধুরী। অধ্যাপক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাঙালিসমগ্র জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক তারিক রহমান। সঞ্চালনা করেন নীরু শামসুন্নাহার।
স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখা এবং রবীন্দ্রনাথের ওপর বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রবন্ধ ও গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বক্তৃতার একপর্যায়ে বলেন, গীতাঞ্জলি শুধু রবীন্দ্রনাথকে নয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সারা বিশ্বে পরিচিত করেছে, ভারতবর্ষ ও এশিয়ার জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছে, সে-কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে গীতাঞ্জলির নিত্যনতুন ইংরেজি অনুবাদ করছেন কবি ও বিদ্বানেরা। এক শ বছর আগের ভাষা ও ভঙ্গি কারও কারও কাছে সেকেলে মনে হয়। কেউ কেউ ভাবেন, রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখার প্রতি সুবিচার করেননি—স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরই তা মনে হয়েছিল একসময়। তবু ইংরেজি গীতাঞ্জলির একধরনের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ আছে—রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বর আমরা এতে শুনতে পাই। আধুনিক অনুবাদ ইংরেজি ভাষার দিক দিয়ে এবং কাব্যসৌন্দর্যের দিক দিয়ে যদি রবীন্দ্রনাথের অনুবাদকে ছাড়িয়েও যায়, তবু আমাদের বারবার করে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির কাছেই ফিরে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.