পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহর দাসত্ব ও বিনয় এমনই হওয়া চাই

[১৩তম পারা শুরু] ৫৩. ওয়া মা---- উবাররিউ নাফসী, ইন্নান নাফসা লাআম্মা-রাতুম বিস সূ----ই ইল্লা- মা রাহিমা রাব্বী, ইন্না রাব্বী গাফূরুর রাহীমুন। ৫৪. ওয়া কা-লাল মালিকু'তূনী বিহী--- আসতাখলিসহু লিনাফসী, ফালাম্মা- কাল্লামাহূ কা-লা ইন্নাকাল য়াওমা লাদাইনা মাকীনুন আমীনুন।
(সুরা ইউসুফ, আয়াত ৫৩-৫৪)
অনুবাদ : ৫৩. আমি নিজেকে নির্দোষ দাবি করি না। নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কাজের প্রতিই প্ররোচিত করে। তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, যাকে আমার প্রভু অনুগ্রহ করেন। অবশ্যই আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়ালু।* ৫৪. বাদশাহ বলল, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে আমার ব্যক্তিগত সহকারী বানাব। পরে যখন তাঁর (ইউসুফের) সঙ্গে কথাবার্তা হলো, তখন বাদশাহ বলল, আজ থেকে তুমি আমাদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা অর্জন করলে, বিশ্বস্ত বনে গেলে। *
তাফসির : * ইউসুফ (আ.) কোন পর্যায়ের বিনয়ী মানুষ ছিলেন, কতটা আল্লাহর দাসত্বের চেতনায় উৎসর্গিত-প্রাণ ছিলেন, আলোচ্য বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে। খোদ চক্রান্তকারী নারীদলের স্বীকারোক্তির মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে, তিনি নির্দোষ। এর পরও তিনি নিজের বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য প্রকাশ না করে সর্বোচ্চ বিনয়ের সঙ্গে বলছেন, আমি যে এই কঠিন বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছি, এতে আমার কোনোই কৃতিত্ব নেই। মন আমারও আছে। তা সব সময় মন্দ কাজের প্রতিই প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এর প্ররোচনা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আল্লাহর পথে জীবন পরিচালনা করতে পারার সাফল্য পুরোটাই আল্লাহর দয়া। কেবল তিনিই চাইলে যাকে ইচ্ছা মনের বা প্রবৃত্তির ছলনা থেকে রক্ষা করেন। কোরআন শরিফের অন্যত্র উলি্লখিত বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস শরিফের বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে এটিও স্পষ্ট যে আল্লাহর অনুগ্রহ কেবল সেই ব্যক্তির ভাগ্যেই জোটে, যে নিজেকে গুনাহ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। যেমন হজরত ইউসুফ (আ.) নিজেকে পবিত্র রাখতে যত রকমের চেষ্টা করার দরকার ছিল, তিনি এর সবই করেছিলেন। দৌড়ে দরজা পর্যন্ত চলে গেলেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, তিনি দৌড় দেওয়ার পর একে একে সব দরজা খুলে গেল। তিনিও গুনাহ থেকে বেঁচে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
* দেখা হওয়ার পর বাদশাহ প্রথমেই ইউসুফ (আ.)-এর কাছে সরাসরি নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি ইউসুফ (আ.)-এর জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব দেখে খুবই মুগ্ধ হলেন। ইউসুফ (আ.) বাদশাহকে খরার বছরগুলোর জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে চমৎকার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এটিও বাদশাহর কাছে খুবই পছন্দ হয়। মোট কথা ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি তাঁর দুর্বলতা ও শ্রদ্ধা জন্ম নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বাস তৈরি হয়, তিনি নিশ্চয়ই সাধক মানুষ। পরেই বাদশাহ তাঁকে বললেন, আপনার প্রতি যেহেতু আমাদের পূর্ণ আস্থা তৈরি হয়েছে, অতএব আপনি এখন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাবেন। ইউসুফ (আ.) দুর্ভিক্ষের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা শুনে বাদশাহ বললেন, এই দায়িত্ব পালন করবে কে? তখন জবাবে তিনি বললেন, আমি এই দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছি।
তাফসিরে তাওযিহুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির

No comments

Powered by Blogger.