বন্ধুত্বের উপহার মৃত্যু-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কাম্য

বাবার চেহলাম আয়োজন চলাকালেই নিজের মৃত্যুর আয়োজন হয়ে গেছে বাল্যবন্ধুর মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নরসিংদীর আরিফুর রহমান পাভেল একই এলাকার বন্ধু জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে বন্ধুত্বের উপহার হিসেবে পান প্রাণ হারানোর যন্ত্রণা।
মাটিচাপা দিয়ে বন্ধুর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় জাহাঙ্গীর। ভুলে যায় শৈশব থেকে তারুণ্য পর্যন্ত সময়ে প্রাপ্ত বন্ধুর ভালোবাসার কথা। বাবার পেনশনের সময় প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকার সঙ্গে আরো ছয় লাখ টাকা মিলিয়ে পাভেল বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় দরবেশের মাধ্যমে দ্বিগুণ করে দেওয়ার জন্য।
জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা বিশ্বাস এভাবে ঠুনকো হয়ে যাবে- এটা নিশ্চয়ই কেউ কল্পনা করতে পারে না। মানবিক মূল্যবোধ এভাবে উধাও হতে পারে এটা নিশ্চয় পাভেলও ভাবতে পারেননি। কিন্তু বন্ধু যখন খুনি হয়ে যায় তখন বিশ্বাস আর অবিশ্বাস এভাবেই কর্পূরের মতো উবে যায়। কিন্তু শিক্ষিত তরুণ পাভেল কিভাবে বিশ্বাস করলেন, কোনো দরবেশের ছোঁয়া পেয়ে টাকা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে? এমন অবাস্তব বিষয়কে কিভাবে গ্রহণ করতে পারে সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন একজন মানুষ? বাস্তবতা হলো, আমাদের এখানে কুসংস্কার ও অন্ধত্ব এতই শক্তিশালী যে প্রায়ই পাভেলের মতো প্রতারিত হওয়ার সংবাদ আমাদের পড়তে হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানেই এমন ঘটনা ঘটছে। কোথাও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেলেও অর্থদাতার প্রাণহানির ঘটনা ঘটে কম। কিন্তু নরসিংদীর এই হত্যাকাণ্ড সবার বিবেককে ধাক্কা দিয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অর্থের লোভে মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে।
পাশাপাশি এ ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে দেশে আইনের শাসন কতটা দুর্বল। আর আইনের শাসন দুর্বল বলেই চারদিকে অবিরাম ঘটে চলেছে খুন-রাহাজানি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো অসংখ্য ঘটনা। এখনো যদি লাগাম টেনে না ধরা হয়, তাহলে এ জাতীয় নৃশংস ঘটনায় সমাজের স্থিতি-শান্তি সব কিছুই বিপন্ন হয়ে যাবে। আমরা পাভেল হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

No comments

Powered by Blogger.