শান্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন শান্তির সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক শান্তি সূচকে (জিপিআই) গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ ধাপ পিছিয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক হলো এই সূচক ধরে রাখতে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা এবং কার্যকর প্রচেষ্টার অভাব।
যেসব বিবেচনায় জিপিআই সূচক ধরা হয়, সেগুলো হলো সামাজিক নিরাপত্তা, সংঘাতের ব্যাপ্তি ও সামরিকীকরণের মাত্রা। জিপিআই-২০১৩ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস। বিশ্বের ১৬২টি দেশের শান্তি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সংস্থাটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তার গুরুত্ব নেহাত কম নয়।
গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম এবং এবার উল্টো যাত্রায় ১০৫ হয়েছে। আমরা চাইলেই এই অধোগতি ঠেকাতে পারতাম। এ কথা ঠিক যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে জিপিআইএ বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে। কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই এ কারণে যে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ যেভাবে গোষ্ঠী ও আঞ্চলিক সংঘাত লিপ্ত, সমগোত্রীয় বাংলাদেশে তা বিদ্যমান নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানে ১৫ বছর আগেই আমরা চুক্তি করেছি। তাহলে শান্তি সূচকে পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?
গত বছর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং অতি সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে আক্রমণের ঘটনা যে সামাজিক নিরাপত্তাকে অনেকটা নাজুক করে দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর সঙ্গে লাগাতার রাজনৈতিক সংঘাত না থামাতে পারাও সরকারের বড় ধরনের দুর্বলতা বলে মনে করি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে চলতি বছরের শুরু থেকে যে চিহ্নিত গোষ্ঠীটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে, সরকার সেটিকে নিছক আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে দেখছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের বিষয়টি অনেকটা নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেই সীমিত রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন কিংবা অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগও অনুপস্থিত।
এ কথা ঠিক, বিশ্বজুড়েই শান্তিসূচক নিম্নমুখী। কিন্তু যেসব কারণে আশপাশের কিংবা দূরের দেশে শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, তার কোনোটিই আমাদের দেশে নেই। তার পরও বাংলাদেশ কেন পেছনে হাঁটবে?

No comments

Powered by Blogger.